বিখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গল্প

জুলিয়াস সিজার। একজন বিখ্যাত রোমান রাজনীতিবিদ, সেনাপতি ও জনপ্রিয় রোমান সম্রাট। রোম প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও রোম সাম্রাজ্যের বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জুলিয়াস সিজার ১০০ খ্রিস্টপূর্বে প্রাচীন রোমের সুবুর শহরের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৬ বছর বয়স থেকে তিনি গৃহশিক্ষক এন্টোনিও এর কাছে রোমান আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৬ বছর বয়সে তার বাবা মারা গেলে তিনি পরিবারের দায়িত্ব নেন। ১৭ বছর বয়সে রোমের এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের মেয়ে কর্নেলিয়াকে বিয়ে করেন। সেই সময় রোমের শাসক ছিলেন সুলা। যার সঙ্গে সিজারের পরিবারের ভীষণ শত্রুতা ছিল। শাসক সুলার প্রভাব থেকে দূরে থাকতে তরুন বয়সেই সিজার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং রোম ছেড়ে চলে যান।

সুলার মৃত্যুর পর সিজার রোমে ফিরে আসেন। খুব শিগগিরই তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে পদোন্নতি পান এবং রোম সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আভির্ভূত হন। ধীরে ধীরে পম্পেই ও ক্রেসাসসহ রোমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন।
সিজার খুব ভালো বক্তৃতা করতে পারতেন। যে কারণে রোমানরা তাকে খুব ভালবাসত।

৪০ বছর বয়সে তিনি রোম সরকারের ‘কনস্যুল’ নির্বাচিত হন। এটা ছিল রোম প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদ। কনস্যুল হিসেবে দায়িত্বপালনের পর তিনি গল প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন। গভর্নর হিসেবে রোমের চারটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন সিজার। তিনি অত্যান্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং গলের সব জনগণের মন জয় করেন। ফলে পম্পের পাশাপাশি সিজারকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান সেনাপতি হিসেবে সম্মান জানায় রোমানরা।

ধীরে ধীরে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে রোমের রাজনীতি। সিজারের সাফল্যে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে ওঠেন সেনাপতি পম্পেও। এসময় সিজারের পাশে এসে দাঁড়ায় রোমের সাধারণ জনগণ আর অভিজাতরা সমর্থন দেয় পম্পেওকে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। গল ছেড়ে রোমে যাওয়া এবং আবারো কনস্যুল পদ দখলের ঘোষণা দেন সিজার। রোমের সিনেট সিজারকে সেনাপতির পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু সিজার তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং সৈন্য নিয়ে রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

৪৯ খ্রিস্টপূর্বে সিজার রোম দখল করেন। পম্পেই পালিয়ে মিশর চলে যান। তাকে ধরতে মিশর যান সিজার। সেখানে মিশরের রাজা পম্পেওকে হত্যা করে তার খন্ডিত মাথা সিজারকে উপহার হিসেবে দেন। মিশরে থাকাকালে তিনি সেখানকার রানী ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়েছিলেন। সিজারের সহায়তায় রানী ক্লিওপেট্রা মিশরের সিংহাসন জয় করেছিলেন।

৪৬ খ্রিস্টপূর্বে সিজার রোমে ফিরে আসেন এবং রোমের সিনেট তাকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেয়। আর সিজার হয়ে যান বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। নিজহাতে শাসনভার নেয়ার পর সিজার পুরো রোম শহরকে বদলে দেন। তিনি রোমে অসংখ্য বড় বড় অট্টালিকা ও গির্জা নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে তিনি রোমান ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে ৩৬৫ দিনে বছর গণনা করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ও লিপ ইয়ারের প্রবর্তন করেন।

সিজারের খ্যাতির কারণে তার বিরুদ্ধে আবারো শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ক্যাসিয়াস ও ব্রুটাসের নেতৃত্বে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ৪৪ খ্রিস্টপূর্বের ১৫ মার্চ, সিজার সিনেটে প্রবেশ করা মাত্রই তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। প্রায় ২৩টি ছুরিকাঘাতের পর অবশেষে না ফেরার দেশে চলে যান এই মহান সম্রাট।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: