প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সংক্ষিপ্ত জীবনী

“যেতে নাহি দিব হায়, তবুও যেতে দিতে হয়” এই লাইন দুটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থকতা রয়েছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটা স্বার্থকতা বহন করে। পৃথিবীতে সাময়িক সময়ের জন্য তাদের আগমন ঘটলেও, তাদের কীর্তি রয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। তেমনই ব্যক্তিত্ব ছিলেন নোয়াখালীর কীর্তি সন্তান, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, টেলিভিশন উপস্থাপক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।

পরিচিতি:

১৯৫২ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক । শৈশবের বেশ বড় একটা সময় পার করেন ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে তার নানা বাড়ীতে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন:

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৯৮৬ সালে আনিসুল হক তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজি জাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।

২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল সময়ে বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। ১৯৮০ দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ নামে দু’টি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন।

রাজনৈতিক জীবন:

আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হন তিনি।

আনিসুল হকের অর্জন:

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। ১৪ মে দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়ন, খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, উন্মুক্ত স্থান, সড়কবাতি জ্বালানো, সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণ, সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। নির্বাচনের আগে ‘সমস্যা চিহ্নিত, সমাধান যাত্রা’ নামে একটি নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেন তিনি। সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ, নিরাপদ, স্মার্ট, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ে তোলার অভিযাত্রা শুরু করেন আনিসুল হক।

পারিবারিক জীবন:

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের তিন সন্তান- দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে তানিশা ফারিয়ামান এবং ওয়ামিক উমাইরা। আনিসুল হকের ছোট ভাই ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান।

মৃত্যু:

এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের শেষ পরিণতি কোনও ভাবে মেনে নিতে পারেনি সর্বস্তরের জনগণ। ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তার মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ধরা পড়ে। ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। ৩০ নভেম্বর লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on: