গতি মানব উসাইন বোল্টের সাফল্যগাঁথা

সফলতা কারও রূপ দেখে আসে না। যথেষ্ট সাধনা করলে এটা যে কারো কাছে ধরা দেবে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিতে গেলে যে কয়জন কিংবদন্তি নাম সবার আগে চলে আসে তাদের একজন উসাইন বোল্ট।

বিশ্বের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি অ্যাথলেট উসাইন বোল্ট। অলিম্পিক তালিকার শীর্ষে থাকা খেলোয়াড়দের একজন। টানা তিনটিসহ অলিম্পিকে মোট নয়টি স্বর্ণপদক জিতেছেন এই কিংবদন্তি।

আজ বিশ্ব তার দেশ জ্যামাইকাকে যতটা না জানে তার চেয়ে বেশি চেনে উসাইন বোল্টকে। কারণ, দীর্ঘ ক্যারিয়ার জীবনে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে এককভাবে রাজত্ব করেছেন এই গতি মানব।

১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট জ্যামাইকার ট্রেলোনি অঞ্চলের ছোট শহর শেরউড কনটেন্টে জন্মগ্রহণ করেন বোল্ট।

তরুণ বয়সে ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করে সময় কাটিয়েছেন তিনি। তার রহস্যময়ী মনোভাব ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে খুব আকর্ষণীয় ছিল।

এক সময় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু তার বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচয় ফুটে ওঠে স্প্রিন্টে। তাই তাকে আরও গুরুত্ব সহকারে দৌড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়।

১৫ বছর বয়সেই বোল্ট সমসাময়িক প্রতিযোগীদের হারিয়ে তার বিস্ময়কর প্রতিভার জানান দেন। অনেকের ধারণা, দৌড়ানোর জন্য স্প্রিন্ট তারকাদের ছোট ও শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু ৬ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার বোল্ট সবার এ ধারণা ভুল প্রমাণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বোল্ট খুব একটা উগ্র ছিলেন না। তবে নাচ খুব উপভোগ করতেন তিনি। তাই প্রায়ই জ্যামাইকার কিংস্টনে নাইট ক্লাবে যেতেন। তবে এটা তার ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলেনি।

বোল্ট প্রথমবারের মতো ২০০২ সালে ২শ’ মিটারে বিশ্বযুব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেন। এরপর ২০০৩ সালের বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে আবার স্বর্ণপদক জিতেন।

২০০৪ সালে নতুন কোচ ফিজ কোলম্যানের নির্দেশনায় বোল্ট আরও পেশাদার হয়ে ওঠেন। ফলে ২০০৫ সালে যুবদের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি রেকর্ড গড়েন।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই ইনজুরি পেয়ে বসে থাকে। বেশকিছু দিন তিনি মাঠের বাইরে ছিলেন। কিন্তু তার শীর্ষস্থান ধরে রাখতে লড়াই চালিয়ে যান তিনি।

তার সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ২০০৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যেখানে তিনি ২০০ মিটার ও 4*100 মিটার রিলেতে রৌপ্য পদক জিতেন।

২০০৮ সালে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বোল্ট নতুন বিশ্ব রেকর্ড করেন। নিউইয়র্ক সিটির ইকাহান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রিবেক গ্র্যান্ড প্রিক্স প্রতিযোগিতায় ৯.৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি এই রেকর্ড গড়েন।

বোল্ট আরো বড় চমক দেখান ২০০৮ সালে অলিম্পিকে। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ৯.৬৯ সে. সময় নিয়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। পরে ২০০ মিটারেও স্বর্ণপদক জিতে মাইকেল জ্যাকসনের আগের রেকর্ড ভেঙে দেন।

২০০৯ সালে বার্লিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১শ’ মিটার, ২শ’ মিটার ও ১শ’ মিটার রিলে সবকটিতেই স্বর্ণপদক জিতেন বোল্ট। শুধু তাই নয়, ১শ’ মিটারে ৯.৫৮ সে. এবং ২শ’ মিটারে ১৯.১৯ সে. সময় নিয়ে তার নিজের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।

২০১২ সালের অলিম্পিকে বোল্ট তিনটি গোল্ড মেডেল জিতেন এবং পুরুষদের ১০০ মিটার রিলেতে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন।

২০১৩ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আবারো ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ১০০ মিটার রিলে সবকটিতেই স্বর্ণপদক জিতে স্প্রিন্টে একক রাজত্বের পরিচয় দেন বোল্ট।

ইনজুরির কারণে ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে অংশ নেননি তিনি। তবে দলগত ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জিতে নিজেকে একজন সুপারস্টার প্রমাণ করেন।

ইনজুরির কারণে বোল্টের ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। তারপরও তিনি লড়াই করেন এবং আবারও ব্যক্তিগত তিন ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে রেকর্ড করেন।

এ নিয়ে মোট নয় নয়টি অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেন এই গতি মানব; যা এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি।

অবসরের আগে বোল্ট সর্বশেষ ২০১৭ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন। তবে ক্যারিয়ারের শেষটা তিনি রাঙাতে পারেন নি। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে তৃতীয় স্থান নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

এরপর ইনজুরি মারাত্মকভাবে চেপে ধরে তাকে। ক্রীড়াঙ্গনকে স্থায়ীভাবে বিদায় বলে দেন তিনি। ফলে ক্রীড়া বিশ্ব থেকে বোল্টযুগের অবসান ঘটে।

বর্তমানে ব্রিটেনে একটি জামাইকান ফুড আউটলেট নিয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো পার করছেন কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট।

অতএব, এই গতি মানবকে হয়তো আর মাঠে দেখা যাবে না। কিন্তু তিনি অ্যাথলেটে যেভাবে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন তা যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে এই কিংবদন্তিকে।

 

ইন্টারনেট অবলম্বনে লিখেছেন এনামুল হক।

 

Share this news on: