বিশ্বকে এগিয়ে দিচ্ছে জেনারেল ইলেক্ট্রিক

বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। সবকিছুই মানুষের হাতের নাগালে। খুব সহজেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের খোঁজ-খবর রাখা যায়।

অন্যদিকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে চলছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় বিশ্বে রাজত্ব করছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। রাখছে বিশ্বায়নে ক্ষেত্রে অবদানও।

বিশ্বের বৃহৎ ও প্রাচীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ‘জেনারেল ইলেক্ট্রিক কোম্পানি’। ১২৬ বছর ধরে সারাবিশ্বে প্রযুক্তিখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

১৮৯২ সালের ১৫ এপ্রিল নিউইয়র্কে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি। বর্তমানে এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্র। কোম্পানিটি যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন থমাস এডিসন, চালর্স এ কফিন, ইলিহু থমসন, এডউইন জে হোস্টন এবং জে পি মরগান।

এর আগে থমাস আলভা এডিসন ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘এডিসন ইলেক্ট্রিক লাইট কোম্পানি’। কিন্তু সেই সময় এডিসনের প্রতিযোগী ছিল থমসন-হোস্টন কোম্পানি।

১৮৯২ সালে এই দুই কোম্পানি আরও কয়েকটি কোম্পানি মিলে গড়ে তুলেন ‘জেনারেল ইলেক্ট্রিক’। পরে ১৮৯৪ সালে এডিসন তার শেয়ার বিক্রি করে একজন উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। কোম্পানির দায়িত্ব পান চালর্স এ কফিন। তিনি ১৯১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৮৯৬ সালে এটি নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটে স্থান পায়। বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় ১২টি স্টক মার্কেটের তালিকায় রয়েছে কোম্পানিটি। ১৯০০ সালে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করে।

১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি বৈদ্যুতিক টান্সফরমার উৎপাদন শুরু করে। কোম্পানিটির সাথে সম্পৃক্ত আবিষ্কারের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাল্ব (১৮৭৯), বৈদ্যুতিক স্টেশন (১৮৮২), বৈদ্যুতিক ভ্রমণযন্ত্র (১৮৮৩), এক্সে মেশিন (১৮৯৬), ব্রডকাস্ট রেডিও (১৯০৬), গৃহস্থালির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ভেকাম টিউব (১৯১২), টেলিভিশন (১৯১৭), প্রথম জেট ইঞ্জিন (১৯৪১), প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট (১৯৫৭) উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে কোম্পানিটি ১৮০টি দেশে ৯ ধরনের উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো হলো- এভিয়েশন, স্বাস্থসেবা, নবায়নযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল, এডিটিভ, বেঞ্চার ক্যাপিটাল এন্ড ফিনান্স, লাইটিং, যাতায়াত, পাওয়ার, বেকার হিউজেস, গ্লোবাল রিসার্জ এবং তেল ও গ্যাস।

সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন লাখ ১৩ হাজার কর্মী কাজ করছে। কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্য ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গৃহস্থালির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে বোয়িং ৭৮৭ এর জন্য জেটইঞ্জিন পর্যন্ত বিস্তৃত এর উৎপাদন ক্ষেত্র।

২০১৭ সালে ফরচুন তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৩তম এবং বিশ্বের ৩১তম বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের স্থান পায় জেনারেল ইলেক্ট্রিক। ২০১২ সালে ফরচুনের হিসেবে বিশ্বের চতুর্থ কোম্পানির স্থান দখল করে এটি। ২০১১ সালে ‘জেনারেল ইলেক্ট্রিনিককে ষষ্ঠ বৃহৎ কোম্পানি এবং ১৪তম লাভজনক প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করে ফরচুন।

কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডাদের দ্বারা পরিচালিত। এর রয়েছে একটি পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কোম্পানিটির প্রধান কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান জেফ্রেই আর. ইমেল্ট, জন ফ্ল্যানারি, জন জি. রাইচ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য শেয়ার আছে ইলিজাবেথ জে কমস্টকের।

প্রতিষ্ঠানটির দুই গবেষক নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৩২ সালে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানী আভিং ল্যাংমিউয়র এবং ১৯৭৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানী ইভার ইয়্যাভার এ পুরস্কার অর্জন করেন।

চলতি বছরের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এইচ. লরেন্স কাপ জে.আর।

ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশদূষণ রোধে কাগজের ব্যবহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বায়নকে আরো গতিশীল করতে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

Share this news on: