পোলো শার্ট: বিক্রি ১৮ ডলার শ্রমিকরা পান ৫৪ সেন্ট  

 

বাংলাদেশে একটি পোলো শার্ট তৈরিতে ব্যয় হয় ৩ ডলার ৪ সেন্ট। তা বিক্রি করা হয় ১৮ ডলারে। আর পোশাক শ্রমিকরা মজুরী পান ৫৪ সেন্ট। যা বিক্রয় মূল্যের তুলনায় যৎসামান্য।

বৃহস্পতিবার শ্রমিক অধিকার সংস্থা ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন (এফডব্লিউএফ) ও নিটওয়্যার খাতের সংগঠন বিকেএমইএ ‘লেবার মিনিট কস্টিং অ্যান্ড প্রাইস নেগোসিয়েশনস উইথ বায়ার্স’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরেন।

সংস্থা দুটির তথ্য অনুযায়ী, ১৮ দশমিক ২৫ ডলার বিক্রয়মূল্যের পোলো শার্ট তৈরিতে কাপড়ে ব্যয় হয় ১ ডলার ৭৫ সেন্ট। অ্যাকসেসরিজ বা অনুষঙ্গ বাবদ ব্যয় হয় ৪০ সেন্ট। প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারি বাবদ ব্যয় হয় ২৫ সেন্ট ও প্যাকেজিং বা হ্যাংট্যাগে ব্যয় হয় আরো ১০ সেন্ট। অর্থাৎ পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ইনপুট বা কাঁচামালসহ উপাদান বাবদ ব্যয় ২ ডলার ৫০ সেন্ট।

অন্যদিকে ডিরেক্ট লেবার কস্ট বা শ্রমিকের পেছনে প্রত্যক্ষ ব্যয় হয় প্রতি পিসে ৩৩ সেন্ট। ইনডিরেক্ট কস্ট বা পরোক্ষ ব্যয় হয় পিসপ্রতি ২১ সেন্ট। অর্থাৎ শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয় প্রতি পোলো শার্টে ৫৪ সেন্ট।

শ্রমিক বাবদ এ ব্যয়ের সঙ্গে ম্যাটেরিয়াল ইনপুট যোগ করার পর একটি পোলো শার্টের ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট বা উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৩ ডলার ৪ সেন্ট।

এর বাইরে ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় হয় প্রতি পিসে ১৭ সেন্ট। কারখানা চালানোর ব্যয় প্রতি পিসে ২৯ সেন্ট। সব মিলিয়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ ডলার ৫০ সেন্টে। এর সঙ্গে প্রস্তুতকারকরা ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে এ পোলো শার্ট বিক্রি করেন ৩ ডলার ৮৫ সেন্টে।

অন্যদিকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বীমা ও পরিবহন এবং শুল্ক বাবদ ব্যয় ধরে এর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন প্রতি পিস ১৮ ডলার ২৫ সেন্ট।

এফডব্লিউএফের মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার কোয়েন ওয়েস্টারম বলেন, ফেয়ার ওয়্যারের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, পোশাকের মূল্যের বিষয়টি প্রতিযোগিতামূলক ফ্যাশন বাজারের বিবেচনায় খুবই স্পর্শকাতর। এর বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, ভোক্তারা যে মূল্য পরিশোধ করেন, তার খুব সামান্যই পান শ্রমিক।

বিকেএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, কমপ্লায়েন্স ও নতুন মজুরি ব্যয়ভার ক্রেতারা বহন করতে চান না। অন্যদিকে পণ্য সরবরাহকারীরা বিস্তারিত মূল্য প্রকাশের বিষয়ে রক্ষণশীলতা অবলম্বন করেন। পণ্য সরবরাহকারীরা মূল্যের বিস্তারিত ব্রেকডাউন দিতে বেশির ভাগ সময়ই অনাগ্রহী থাকেন। কারণ তারা ভাবেন, এ ব্রেকডাউন মূল্য কমানোর চাপ বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের দাম কমার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে পোশাকগুলো একেবারেই সাধারণ বা কম দামি। রফতানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশই হচ্ছে সাধারণ টি-শার্ট, সিঙ্গলেট, ভেস্ট, জার্সি, পুলওভার, কার্ডিগান, স্যুট, জ্যাকেট, ট্রাউজার, শর্টস ও শার্ট। এ ধরনের পোশাকে মূল্য সংযোজন হয় অনেক কম। এ কারণেই পরিমাণ বাড়িয়ে এসব পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিতে পারছেন ক্রেতারা।

 

টাইমস/এমএএইচ/জেডটি

Share this news on: