ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ইত্যাদিতে গান গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সেই আকবর এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। তিনি সাত বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সেই সঙ্গে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে জন্ডিস।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গায়ক আকবর সর্বশেষ গান গেয়েছেন ১১ জানুয়ারি, সাভারে। মেয়ের স্কুলের ভর্তির টাকা জোগাড় করতে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। বাসায় ফিরে সেই যে শয্যাসায়ী হয়েছেন, আর উঠতে পারেননি।
এরপর গত মঙ্গলবার আকবরকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর পিজি হাসপাতালে। শুরুতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে, পরে ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগের ১৬ এ ওয়ার্ডে নেয়া হয় তাকে। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহিমের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।
রক্তে প্রদাহসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। ডায়াবেটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পুরো শরীরে ফোসকা পড়ে গেছে তার। ফোসকার যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ পর পর ভেঙে যায় ঘুম। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাউমাউ করে কাঁদেন তিনি।
আকবর বলেন, আমার কারণে পুরো পরিবার পথে বসতে যাচ্ছে। এত রোগ আল্লাহপাক আমাকে দিয়েছেন যে, এর পেছনেই আমার টাকাপয়সা সব শেষ। পত্রিকায় আমার অসুস্থতার খবর প্রকাশের পর অনেকে সহযোগিতা করছেন। আমি সবাইকে হাতজোড় করে বলছি, প্লিজ আমার পাশে দাঁড়ান। আমাকে সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংস্কৃতি জগতের অনেককে সহযোগিতা করেছেন। তার এই সহযোগিতায় সবাই সুচিকিৎসা পেয়েছেন। সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই —আমি বাঁচতে চাই, গাইতে চাই। আপনি আমাকে বাঁচান, আমাকে আবার গাইবার সুযোগ করে দিন।
আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা জানান, তার স্বামীর চিকিৎসার দেখভাল করছেন হানিফ সংকেত। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়া, পরিচিতজনদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে অকবরের চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
ভারতের ভেলোরে ২০১৫ সালে টানা এক মাসের কিডনির চিকিৎসাখরচ হানিফ সংকেত দিয়েছিলেন বলে জানান আকবরের স্ত্রী।
তিনি বলেন, এবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েও দিয়েছেন তিনি। স্যার (হানিফ সংকেত) যখন যেভাবে পেরেছেন, সাহায্য করছেন।
কানিজ ফাতেমা বলেন, পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও ওষুধ বাবদ হাজার হাজার টাকা প্রতিদিন খরচ হচ্ছে। তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে এখন অনেক টাকার প্রয়োজন।
পরিবার নিয়ে আকবর মিরপুর ১৩ নম্বরে থাকেন। তার বড় মেয়ে আছিয়া আকবর অথৈ হারম্যান মাইনর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে কামরুল ইসলাম ও মহরম থাকে গ্রামের বাড়ি যশোরে।
প্রসঙ্গত, গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। ২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর।
বাগেরহাটের এক ব্যক্তি আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ওই বছর ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান আকবর।
এরপর ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটি দেশে ও দেশের বাইরের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে তাকে পরিচিত করে তোলে।
টাইমস/এক্স