ফের ‘স্তালিন’র দেখা মিলল মঞ্চে

কামালউদ্দিন নীলুর নির্দেশিত নাটক ‘স্তালিন’। গত জুন মাসে মঞ্চে এসে বেশ তোলপাড় তুলে এই নাটকটি। এরপর থেকে দর্শক মুখে শোনা যায় স্তালিনের গল্প। তবে মাঝে খানিকটা সময় বন্ধও থাকে এটি।

এদিকে, বিরতি শেষে ফের মঞ্চে আসছে সাড়া জাগানো নাটক ‘স্তালিন’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ১৯ ও ২০ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি)’ প্রযোজিত ‘স্তালিন’-এর বিশেষ প্রদর্শনী।

নাটকটির ভাষান্তর করেছেন রায়হান আখতার। জোসেফ স্তালিন শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাসও বটে। ১৯২২ থেকে ৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে স্তালিন যে রাজনৈতিক মতবাদ উপস্থাপন করেছিলেন সেটি ছিল ‘স্তালিনবাদ’। আর এ স্তালিনবাদের জন্যই এই নামটি বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিত।

ফাইল

জোসেফ স্তালিন মনে করতেন, মৃত্যুই সব সমস্যার সমাধান। মানুষ যদি না থাকে তাহলে কোনো সমস্যাও থাকবে না। তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়েই নাটক ‘স্তালিন’।

নাটকটির শুরুতে দেখা গেছে, নিজের বাগানবাড়িতে বসে চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের একটি সিনেমা দেখছেন জোসেফ স্তালিন। মাঝপথে হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। ডেকে পাঠান তার পলিটব্যুরোর সদস্যদের। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্তালিনের মেয়ে সভেৎলানা, সেক্রেটারি আলেকজান্ডার এবং দেহরক্ষী মেজর ভ্লাসিক। ঠিক সেসময় বাগানবাড়িতে চলে আসেন স্তালিনের গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান।

পলিটব্যুরোর সদস্যদের মাঝ থেকে কাকে কাকে ছাঁটাই করতে হবে সে তালিকা তিনি ধরিয়ে দেন স্তালিনের হাতে। তারপর তিনি রাজনীতির এক জটিল ও নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠেন। সম্পূর্ণ স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে একের পর এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। নাটকের শেষে জোসেফ স্তালিনকে পুরোপুরি একা হয়ে যেতে দেখা যায়।

গত ১৯ ও ২০ আগষ্ট শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি। ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ব্যাপ্তির এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিনা সুলতানা, রায়হান আখতার, এ কে আজাদ, শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ রাফী সুমন, শাওন কুমার দে, শিপ্রা দাস, শান্তনু চৌধুরী, সুব্রত প্রসাদ বর্মণ, মেজবাউল করিম, চিন্ময়ী গুপ্তা প্রমুখ।

ফাইল

এর আগে ঈদুল ফিতরে পর মঞ্চে উঠেছিল ‘স্তালিন’। ওই সময় তিন দিনব্যাপী নাটকটি মঞ্চায়নের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের মঞ্চায়ন শেষেই ১১ জুন রাতে নাটকটি দর্শক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠেছিল নাটকটির বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল শিল্পকলা একাডেমি। নাটক শেষে একযোগে শুরু হয় প্রতিবাদও। ‘সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগান উঠেছিল ওই সময়। টানা ১৫ মিনিট চিৎকার আর স্লোগান চলেছিল জাতীয় নাট্যশালার সামনে এবং মিলনায়তনের ভিতরে। পরে সিনিয়র নাট্যকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

১১ জুনের প্রতিবাদের রেশ ছিল ১২ জুন পর্যন্ত। একাডেমির প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুর করে ‘স্তালিন’ নাটকের বিরোধীরা। বাধ্য হয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েনও করা হয়েছিল। পরে তাদের পাহারায় বিকেলে পাঁচটার দিকে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল বিরোধীরা।

ওই প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী বজলুর রশীদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, বাসদ মার্কসবাদী কেন্দ্রীয় নেতা মানষ নন্দী, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের রাজিকুজ্জামান রতন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, নয়া সমাজতান্ত্রিক গণ মোর্চার জাফর হোসেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, নারী মুক্তি ফোরামের শিমা দত্তসহ আরও অনেকে।

এবার দীর্ঘ আড়াই মাস পর ফের মঞ্চে উঠেছে ‘স্তালিন’। গত ১৯ আগস্ট প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে নাটকটির। গতকালও টিকেট বিক্রি ভালো ছিল বলে জানা গেছে।

‘স্তালিন’ নাটকের একাধিক শো করার পরিকল্পনা রয়েছে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের। জানা গেছে, এ নাটকটি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে তাদের। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে মূল হল বরাদ্ধ চেয়েছে দলটি। কিন্তু হল খালি না থাকায় আগামী মাসে শো করা হচ্ছে না বলেও জানান সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।

তিনি আরও জানান, যখনই হল পাবেন তখনই নাটকটি মঞ্চস্থ করতে চান তারা। নাটকটি যেকোনো সময় মঞ্চায়নের জন্য প্রস্তুত পুরো টিম।

এদিকে, স্তালিনের প্রতি দর্শকের আগ্রহের কারণেই নাটকটি একাধিক মঞ্চায়নের পরিকল্পনা করছেন বলে জানান শাহাদাত হোসেন।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: