রানাঘাটের স্টেশন চত্বরের বাসিন্দা রানু মারিয়া মণ্ডল। গত ২০ জুলাই লতা মঙ্গেশকরের ‘প্যায়ার কা নগমা’ গানটি গেয়ে রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়ার সুরসম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছেন তিনি।
এর আগে স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাই ছিল তার পেশা। ভিডিও ভাইরাল হতেই রাতারাতি তারকা বনে যান রানু।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মুখে গাওয়া গান যেমন শ্রোতাদের মন ভিজেছে, ঠিক তেমনি গানটি গেয়ে রানুর কাছে ডাক এসেছে সুদূর মুম্বাই থেকে। এবার বোধ হয় অভাব অনটনের দিন শেষ হচ্ছে রানুর। ভাগ্যের চাবিকাঠি যেন খুলতে শুরু করছে তার।
কে এই রানু মণ্ডল?
রানুর বেড়ে উঠা রানাঘাটের স্টেশন চত্বরে। সেখানে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করতেন তিনি। তার এক মেয়ে। নাম স্বাতী রায়। মা ভিক্ষাবৃত্তি করতেন বলে গত ৪ বছর ধরে মেয়ের চেহারায় দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার।
এই কারণে শেষ চারটি বছর আরও কষ্টে কেটেছে রানুর। রানাঘাট স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি, কখন ফিরে আসবে তার মেয়ে। কিন্তু ফেরা হয়নি তার। তবে মায়ের কাছে মেয়ের আগমন না ঘটলেও এখন হাজারো মানুষ আসেন রানুর কাছে।
শুধুমাত্র তার মুখে শোনার জন্য ‘জিন্দেগি অউর কুছ ভি নহি, তেরি-মেরি কাহানি হ্যায়…’৷ এখন প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ গান শুনতে ভিড় জমাচ্ছেন সেই স্টেশনে। আর রানুও তাদের কথায় গেয়ে যাচ্ছেন আপনমনে।
যেভাবে রানুকে চেনে পুরো বিশ্ব
রানু সবসময়ই রেল স্টেশনে মেয়ের আশায় বসে থাকতেন। আর গাইতেন, ভিক্ষা করতেন। একদিন একইভাবে গাচ্ছিলেন রানু। ওই সময় এক যুবক তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে রেকর্ড শুরু করেন। শুধু রেকর্ডই করেননি বরং তিনি গানটি আপলোড করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর থেকে রাতারাতি তারকা বনে যান রানু।
এদিকে স্টেশন শিল্পীর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রানুর গান শুনে ফোন এসেছে সুদূর দিল্লি-মুম্বাই থেকেও। ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ের এক টেলিভিশন চ্যানেল ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রানুকে। দিল্লির একটি সমাজসেবী সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে।
তবে রানুর ফোন নেই। তাই একটু বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। তবে এই কাজে এগিয়ে এসেছেন এক সহৃদয় ব্যক্তি। তিনি রানুর প্রতিবেশী তপন দাস। বাইরের রাজ্যগুলো থেকে তার মোবাইলেই ফোন আসছে রানুর কাছে।
রানুর ভিডিওটি কে ধারণ করেছেন, এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পেজের মালিক কৃষান দাস জুবুর কাছ থেকে জানা যায়, ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট রেলওয়ে স্টেশনে ধারণ করেন কলকাতার অতিন্দ্র নামের এক ব্যক্তি। পরে তপন নামের আরেক ব্যক্তি ভিডিওটি তার কাছে পাঠিয়ে দেন।
রানুর গানটি ভাইরাল হওয়ার পর রীতিমত বলিউডের প্লে-ব্যাক গায়িকা বনে যান তিনি। সেই সুবাধে রানু এবার খ্যাতনামা সংগীতকার হিমেশ রেশামিয়ার তত্বাবধানে রেকর্ড করে ফেললেন এক নতুন ছবির গান।
সূত্রের খবর, ‘হ্যাপি হার্ডি অ্যান্ড হির’ নামে হিমেশ প্রযোজিত এক ছবির জন্য গান গেয়েছেন রানু মারিয়া মণ্ডল। যেই ছবি আপাতত মুক্তির অপেক্ষায়।
তবে চমকপ্রদ খবর হল, তাতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন সালমান খান। অভিনয় করছেন প্রযোজক হিমেশ নিজেও। ছবির সংগীতের দায়িত্বও হিমেশ রেশামিয়ার কাঁধেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় রানুর গান শুনেই বেশ মনে ধরেছিল হিমেশের। তাকে দিয়েই নিজের ছবির ‘তেরি মেরি কাহানি’ গান গাওয়ালেন হিমেশ। আর তাই জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘সুপারস্টার সিংগার’-এর মঞ্চে রানুকে দিয়ে গান রেকর্ড করানোর প্রতিশ্রুতিও নাকি দিয়েছিলেন হিমেশ। সেই প্রতিশ্রুতিই পূরণ করলেন এবার তার প্রযোজিত ছবিতে বাংলার রানুকে দিয়ে গান গাইয়ে।
এই প্রসঙ্গে সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিমেশ বলেন, সালমান ভাইয়ের বাবা সেলিম আংকেল আমাকে একবার বলেছিলেন জীবনে প্রতিভাধর মানুষের সঙ্গে আলাপ হলে তার পাশে দাঁড়াতে। যথাসম্ভব সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করতে। আমিও সেই চেষ্টাই করেছি।
এরপর রানাঘাটের স্টেশন চত্বর থেকে সোজা হিমেশের রেকর্ডিং স্টুডিওতে রানু। অবাক হলেও এই ঘটনাই সত্যি। মঙ্গলবার থেকে এও শোনা যাচ্ছে, আর স্টেশনে থাকতে হবে না রানুকে, কারণ সালমান নাকি নিজেই এবার তাকে ৫৫ লাখ টাকার বাড়ি উপহার দিয়েছেন। তবে এটা কতটুকু সত্য, তার নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি।
টাইমস/জেকে/এসআই