মটরশুঁটির যত পুষ্টিগুণ

শীত চলে এসেছে। বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। আর এসব শীতকালীন সবজির মধ্যে মটরশুঁটি অন্যতম। খাবারের স্বাদ বাড়াতে অনেকেই এই শস্যদানাকে ব্যবহার করেন বিভিন্ন রান্নায়। সুস্বাদু এই শস্যদানাটির রয়েছে অসাধারণ সব পুষ্টিগুণ।

মটরশুঁটি হলো লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ Pisum sativum এর গোলাকার বীজ। প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে। যদিও এটি এক প্রকারের ফল, এটি মূলত সবজি হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে ২ টুকরা মাছ বা মাংসের বদলে খেতে পারেন এক বাটি মটরশুঁটি। কারণ এটি একদিকে যেমন পুষ্টি গুণে ভরপুর তেমনি এতে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি ও ফ্যাট আছে। এতে কোনো কোলেস্টেরলও নেই। এটা সিদ্ধ, কাঁচা, কিংবা যেকোনো রান্নার সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মটরশুঁটি থেকে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ১৪.৫ গ্রাম, ফ্যাট ০.৫ গ্রাম ও প্রোটিন ৫.৪ গ্রাম। এছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি, ফলিক অ্যাসিড, বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স থাকে। সামান্য পরিমাণে ভিটামিন-কেও থাকে

মেক্সিকান গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি প্রতিদিন ২ মিলিগ্রাম পলিফেলনসমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে তার পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আর এককাপ মটরশুঁটিতে অন্তত ১০ মিলিগ্রাম পলিফেলন থাকে। তাই এটি পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাত দারুণ কার্যকরী।

চলুন জেনে নেয়া যাক মটরশুঁটির নানাবিধ পুষ্টিগুণ-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মটরশুঁটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সুস্থতার জন্য মটরশুঁটি খেতে পারেন। ডায়াবেটিক রোগীরাও নিশ্চিন্তে মটরশুঁটি খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
মটরশুঁটিতে প্রচুর ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে এবং এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে। তাই মটরশুঁটি ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

পাকস্থলীর ক্যান্সার রোধ করে
মটরশুঁটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। মটরশুঁটির দানাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল পাকস্থলীর ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মটরশুঁটি রাখতে পারেন।

হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো
মটরশুঁটি ব্লাডপ্রেশার কমাতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মটরশুঁটিতে থাকা নায়াসিন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও মটরশুঁটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তনালীতে ব্লক হওয়া প্রতিরোধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
মটরশুঁটির অতিরিক্ত ফাইবার উপাদান দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত হতে ফাইবার সমৃদ্ধ এই মটরশুঁটি খেতে পারেন। এছাড়াও মটরশুঁটি বিপাকের উন্নতিতেও সাহায্য করে।

হাড় মজবুত করে
মটরশুঁটিতে থাকা পর্যাপ্ত ভিটামিন-কে শরীরের হাড় শক্ত করতে খুব কার্যকর। তাছাড়া মটরশুঁটির ভিটামিন-বি অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এছাড়াও ফলিক এসিড থাকায় প্রসূতি মায়েরা মটরশুঁটি খেতে পারেন। এতে থাকে প্রচুর আয়রন অ্যানিমিয়া ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্যও মটরশুঁটি খুব উপকারী, কারণ এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এই সবজি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: