প্রোটিনের আধার মসুর ডাল

ডাল-ভাত যেন বাঙালির পরিচয় বহন করে! খাবারের মেন্যুতে তরকারির পাশাপাশি ডালের উপস্থিতি প্রায় পরিবারেই আবশ্যক থাকে। বিভিন্ন ধরনের ডাল আমরা খেয়ে থাকি। তবে, অন্যান্য ডালের তুলনায় মসুর ডালটাই বেশি জনপ্রিয়।

মসুর ডাল হচ্ছে শিম গোত্রের খাদ্যশস্য। এগুলো মূলত শুঁটিজাতীয় মৌসুমি ফলের শুকনো বীজ। ডাল মূলত রবি শস্য কিন্তু সারা বছরই সব ধরনের ডাল পাওয়া যায়।

সাধারণভাবে মসুর ডাল রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি এটা দিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকমের পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার। যেমন– ডালের চচ্চড়ি, ডালনা, নিরামিষ, পিঁয়াজু, ডালপুরি, ডালের স্যুপ, আম ডাল, পুঁই ডাল ইত্যাদি।

আর এই মসুর ডাল প্রোটিনের আধার বলে একে মাংসের বিকল্প হিসেবেও ধরা হয়। তাই নিরামিষ ভোজীদের কাছে এটি অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যেমন, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২, শর্করা ইত্যাদি। মসুর ডাল সহজপাচ্য এবং এতে প্রোটিনের পরিমাণ সর্বাধিক।

প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মসুর ডালে রয়েছে- জলীয় অংশ ১২.৪ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.১ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৪৩ কিলোক্যালরি আমিষ ২৫.১ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, লৌহ ৪.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.৪৯ মিলিগ্রাম এবং শর্করা ৫৯.০ গ্রাম।

চলুন জেনে নিই, মসুরের ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা-

কোলেস্টেরল কমায়
মসুর ডালে উচ্চ মাত্রার এটা দ্রবণীয় ফাইবার থকে যা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটা আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে আপনার ধমনীকে পরিষ্কার রাখে।

হজমে সহায়তা করে
মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে। ফলে এটি হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।

হার্ট ভালো রাখে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মসুর ডালের মতো উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে হার্টের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া মসুর ডাল ফলেট ও ম্যাগনেসিয়ামের একটা বিরাট উৎস, যা হার্টকে আরও বেশি তারুণ্য পেতে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের সর্বত্র রক্ত, অক্সিজেন ও পুষ্টি প্রবাহ করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কমায়
মসুর ডালের ফাইবারে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি শরীরের চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাছাড়া এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী
ডালে একসঙ্গে আয়রন ও ফলেট দুটিই পাওয়া যায়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমাতে
যারা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তারা ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে নিয়মিত ডাল খেতে পারেন। এতে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়াসহ ভরাপেটের অনুভূতি থাকবে দীর্ঘক্ষণ। এছাড়াও মসুর ডাল খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: