সজনে পাতা এমন একটি উদ্ভিদ, হাজার হাজার বছর আগে থেকেই যার ব্যবহার ও পুষ্টিগুনের প্রশংসা করা হচ্ছে। সজনে গাছের পাতা এবং ডাটা উভয়ই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান সজনে পাতার বেশ কিছু উপকারিতা আবিষ্কার করেছে। উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো হচ্ছে-
১. খুব বেশি পুষ্টিকর: ভিটামিন এবং খনিজের একটি উত্তম উৎস সজনে পাতা। এতে আমিষ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, লৌহ এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। তাই সজনে পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: সজনে পাতা কোয়ারসেটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে সমৃদ্ধ। মানব দেহে থাকা মুক্ত র্যাডিকেলস হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগের জন্য দায়ী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যৌগ শরীরে থাকা মুক্ত র্যাডিকেলস এর বিরুদ্ধে কাজ করে। সজনে পাতার গুঁড়া রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
৩. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ: শরীরে রক্তের পরিমান কমে গেলে পানি দিয়ে সজনে ডাঁটা সেদ্ধ করে তার ক্বাথ এবং ডাঁটা চিবিয়ে খেলে রক্তল্পতা দূর হয়।
৪. ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রন করে: রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা (ব্লাড সুগার) হৃদরোগ সহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।
৫. প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে: মানব দেহে প্রদাহ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা সংক্রমণ ও ক্ষত তৈরি করে। প্রদাহ একটি অপরিহার্য ঘটনা হলেও দীর্ঘ সময়ব্যাপী অব্যাহত প্রদাহ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, সজনে পাতায় ইসোথাওসায়ানেট নামে একপ্রকার প্রদাহ প্রতিরোধী যৌগ রয়েছে। তাই প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধে সজনে পাতা একটি উত্তম উপাদান।
৬. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে: উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হৃদরোগের জন্য দায়ী। তিসি, যব, কাজুবাদামসহ অনেক উদ্ভিজ খাবার রয়েছে যা কার্যকরভাবে কোলেস্টেরল কমাতে পারে। গবেষণা বলছে, সজনে পাতা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। তাই এটি উল্লেখযোগ্যভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৭. আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ: পানীয় এবং খাদ্যে আর্সেনিকের উপস্থিতি বিশ্বজুড়ে অন্যতম একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সজনে পাতা আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৮। ব্ল্যাড প্রেসার: ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’ বা খাবার লবন ব্ল্যাড প্রেসার রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। কাজেই এটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে।
এগুলো ছাড়াও সজনে পাতা যেসব উপকারে আসে তা হল-
• বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করে,
• হজম বৃদ্ধিকারক এবং হৃদপিন্ড ও রক্ত চলাচলের শক্তিবর্ধক হিসাবে কাজ করে,
• সজনের ফলের নির্যাস যকৃৎ ও প্লীহার অসুখে ধনুষ্টংকার ও প্যারালাইসিসে উপকারী,
• সজনের মূলের রস হাপানি নিবারক ও মূত্রকারক হিসেবে ভূমিকা রাখে,
• সজনের ডাঁটা কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক বলে দেশীয় ডাক্তাররা পক্ষাঘাত রোগে এটা ব্যবহার করেন,
• সজনের শিকড়ের ক্বাথ কাশি, হাঁপানি, গেটে বাত, কটি বেদনা এবং সাধারণ বাত রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।