চলছে ডেঙ্গু মৌসুম। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এখন এ রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার ব্যাপক দাপট। এ জ্বরে এখন পর্যন্ত চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এই রোগের অন্যতম উপসর্গ হলো শরীরে দ্রুতগতিতে প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট কমে গেলে ইন্টারন্যাল হ্যামারেজ হয়। এতে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা প্রবল হয়।
প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য জরুরি। রক্তে স্বাভাবিক প্লাটিলেটের সংখ্যা হলো প্রতি ঘন মিমি রক্তে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। নানা কারণেই এর সংখ্যা কমে আসতে পারে, আর তখন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি যায় বেড়ে। যেমন প্লাটিলেট এক লাখের কম হলে অস্ত্রোপচার না করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেননা কাটা-ছেঁড়া হলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা কঠিন হয়। প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেমন নাক বা দাঁতের মাড়িতে রক্তপাত, মলের সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি। প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে চলে গেলে দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন অন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনিতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বরে এই প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু খুবই সাময়িক। তিন দিনের মধ্যেই এই সংখ্যা আবার স্বাভাবিকে চলে আসে।
তবে কেবল ডেঙ্গু রোগই নয়, শরীরের প্লাটিলেট জীবন ধারণের জন্য এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার গ্রহণ করি সে সবের মধ্যেই এ উপাদানটির অস্তিত্ব। প্লাটিলেটগুলি গঠনে ভিটামিন এবং খনিজগুলি গুরুত্বপূর্ণ, আপনার রক্ত প্রবাহের উপাদান যা রক্তপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে। আসুন জেনে নেই পাঁচ ধরনের খাবার সম্পর্কে। যা খেলে শরীরে প্লাটিলেট তৈরি হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
সাউথ টেক্সাস ব্লাড অ্যান্ড টিস্যু সেন্টার বলছে- আপনার যদি প্লাটিলেট স্তর নিন্মগামী থাকে বা থ্রোমোসাইটোপেনিয়া থাকে তা আপনার দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তবে খাবারে ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন বি -১২, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘ডি’ বেশি পরিমাণে খেলে এ প্লাটিলেট খুব অল্প সময়েই আবার বাড়ানো যায়।
১. ফোলেট: ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- লেবু, মটরশুটি, মটর, মসুর ডাল এবং সবুজ শাকসবজির মধ্যে অ্যাস্পারাগাস, ব্রাসেলস স্প্রাউটস শরীরে প্লাটিলেট তৈরি করে।
২ আয়রন: আয়রনযুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে মাংস, শিম, বাদাম, পালং শাকে প্লাটিলেট তৈরি হয়।
৩. ভিটামিন বি-১২: এটি কোবালামিন নামেও পরিচিত। এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি মূলত মাংস, লিভার, মুরগি, শেলফিস, ডিম, দুধ এবং পনির জাতীয় প্রাণীতে থাকে। এই খাবারেও শরীরে অবিশ্বাস্যভাবে প্লাটিলেট তৈরি হয়।
৪. ভিটামিন সি: কমলা এবং এ জাতীয় ফলগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে এছাড়া স্ট্রবেরি, পেয়ারা, ক্যান্টালাপ, মরিচ, টমেটো এবং ব্রকলিও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। এগুলো শরীরের প্লাটিলেট তৈরি করে।
৫: ভিটামিন-ডি: সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন-ডি’এর একটি বড় উৎস। তবে স্যামন, টুনা এবং ম্যাক্রাল মাছে এর পরিমাণ খুব বেশি। অন্য উৎসগুলো হলো মাশরুম, ডিম এবং দুধ। নিয়মিত খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট তৈরি হয়।
টাইমস/এমএস/এসআই