চবিতে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মরণব্যাধী থ্যালসেমিয়া প্রতিরোধে কাউন্সেলিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স হলে শুরু হয় এ আয়োজন। সকাল ১০টার হতে অনুষ্ঠান স্থলে আসতে থাকেন বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা।

প্রবেশ পথেই তাদের প্রত্যেককে ধরিয়ে দেওয়া হয় সাদা খাম।শিক্ষার্থীরা হলের ভেতরে ঢুকে কয়েকটি গ্রুপ ভাগ হয়ে খামের ভিতরের যে কাগজটি পড়তে থাকেন।পড়ে নিজেরাই বুঝতে পারেন নিজেরা এ রোগে আক্রান্ত কি না। 

বেলা ১১ টায় শুরু হয় মূল কাউন্সেলিং অনুষ্ঠান। চবিতে এটাই ছিল প্রথম কোন জেনেটিক কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম। এ বিষয়ে প্রোগ্রামের আয়োজক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও থ্যালাসেমিয়া প্রজেক্টের মুখ্য গবেষক মোঃ মাহবুব হাসান বলেন, ‘বছর খানেক আগে বায়োমেডিক্যাল রিসার্স ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর একাডেমিক এবং গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রজেক্টটি শুরু হয়। এর বাস্তবায়ন করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ‘ডিজিজ বায়োলজি এবং মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ’। আর্থিক সহায়তায় আরো ছিল বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হসপিটাল।

মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা, বাহক বা ক্য়ারিয়ারের ব্যাপকতা এবং তাদের মধ্যে কমন মিউটেশনগুলী কি তা নির্ণয়ই ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। এই গবেষণার আওতায় আগ্রহী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের থ্যালাসেমিয়ার রক্ত পরীক্ষা করে তারা বাহক কিনা তা নির্ণয় করা হয় (কেরিয়ার স্ক্রিনিং) হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস এর মাধ্যমে। আজ ছিল সেই বাহক নির্ণয় টেস্টের রিপোর্ট বিতরণ ও পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে জেনেটিক কাউন্সেলিং।

শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. নাজনীন নাহার ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। তারপর এই প্রোগ্রামে জেনেটিক কাউন্সিলর হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ শাহেদ আহমেদ চৌধুরী। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে গবেষকেরা উপস্থিত ৭০ জন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এছাড়া আয়োজক গবেষণা গ্রুপের প্রধান গবেষক ড. আদনান মান্নান পার্বত্য চট্টগ্রামে এই গ্রুপের ভবিষ্যৎ গবেষণা প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, এই গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরতে মুখ্য গবেষক মোঃ মাহবুব হাসান বলেন ,‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪ টি জেলার ৩৪ টি উপজেলার ২৭ টি উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এই প্রজেক্টে অংশ নিয়েছেন। এই গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা তাদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া কি এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে অবগত করেছি। যেহেতু অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাই অদূর ভবিষ্যতে নিজ নিজ পরিবার, সমাজ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিবে, সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে’।

উল্লেখ্য যে, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। যা কিনা বাহক বাহক বিয়ে বন্ধ করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। যার জন্য সচেতনতা একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।

 

টাইমস/এমএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উপজেলা নির্বাচনকালে আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের Apr 20, 2024
img
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন : ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭ Apr 20, 2024
img
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা Apr 20, 2024
img
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ Apr 20, 2024
img
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল Apr 20, 2024
img
তীব্র তাপপ্রবাহ : প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ Apr 20, 2024
img
সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি Apr 19, 2024
img
বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালীদের তালিকায় আলিয়া Apr 19, 2024
img
পালিয়ে আসা ২৮৫ জনকে ফেরত নিচ্ছে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী Apr 19, 2024
img
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার শঙ্কায় নেতানিয়াহু, ইসরায়েলে জরুরি বৈঠক Apr 19, 2024