নামে বেগুন হলেও গুণে সমৃদ্ধ

বেগুন সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। সহজলভ্য ও সারা বছরই মেলে এটি। মধ্য যুগে ইউরোপে যেসব বেগুন পাওয়া যেত সেগুলোর আকৃতি অনেকটাই মুরগির ডিমের মতো ছিল। এ কারণেই বোধহয় ইংরেজিতে বেগুনের নাম এগপ্ল্যান্ট।

বাঙ্গালী বেগুনের ভর্তা থেকে শুরু করে কতভাবে যে বেগুনের ব্যবহার করে থাকে তা বলা মুশকিল। কিন্তু অনেকেই জনি না এই বেগুনের গুণাগুণ সম্পর্কে। যার কারণে, অনেকে বলেন, যার নেই কোন গুণ তার নাম বেগুন।

কিন্তু গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন, এটি শুধু একটি তরকারীই নয় বরং এতে রয়েছে রোগমুক্তিসহ বহু উপকারিতা।

তাদের মতে, বেগুনে flavedon, kolinergik এসিড নামে এক ধরনের এসিড রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশকৃত রোগ জীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-জাতীয় খাদ্য উপাদান। যা বদ হজম দূর করে। বেগুন এর উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে।

এছাড়া বেগুনে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এবং কম বা বেশীমাত্রায় লবণ। এতে ভিটামিন এ, বি, সি, ও লোহা রয়েছে।

১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি। এর মধ্যে শর্করা- ৫.৮৮ গ্রাম, চিনি- ৩.৫৩ গ্রাম, খাদ্যআঁশ- ৩ গ্রাম, চর্বি- ০.১৮ গ্রাম, আমিষ- ০.৯৮ গ্রাম, থায়ামিন- ০.০৩৯ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন- ০.৬৪৯ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬- ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, ফোলেট- ২২ আইইউ, ভিটামিন সি- ২.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই- ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে- ৩.৫ আইইউ, ক্যালসিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম, আয়রন- ০.২৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ- ০.২৩২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস- ২৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ২২৯ মিলিগ্রাম এবং জিংক- ০.১৬ মিলিগ্রাম।

আসুন জেনে নেই গুণে ভরপুর বেগুন নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ এড়ানো যায়-

ক্যান্সার প্রতিরোধক
যারা বেশি পরিমান শাক-সবজি খায়, তাদের ক্যান্সারের আশঙ্কা কম থাকে। বেগুনে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান। বেগুন পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদ্রান্ত্রের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে।

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে
কোলেস্টেরল হলো একধরণের চর্বি, যা রক্তে জমে। বেগুনে কোন কোলেস্টেরল নেই। যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি, তাদের জন্য বেগুন আদর্শ খাদ্য। কারণ, বেগুন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে
বেগুনে আছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। আয়রন শরীরে রক্ত বাড়াতে সহায়তা করে। তাই রক্ত শূন্যতার রোগীরা খেতে পারেন এই সবজি। উপকারে আসবে।

মুখের ঘা প্রতিরোধ করে
বেগুনে আছে রিবোফ্ল্যাভিন। রিবোফ্ল্যাভিন মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করে। জ্বর হওয়ার পর মুখের বিস্বাদও দূর করে বেগুন। তাই জ্বরের পর বেগুনের তরকারি খেলে মুখের স্বাদ ফিরে পাওয়া যেতে পারে।

ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে
বেগুন ক্ষত স্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘কে’। এরা শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল কার্যক্রমকে সচল রাখে।

চোখের রোগে বেগুন
বেগুন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজি। বেগুনের ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুব উপকারী। এটি চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বেগুনে আছে প্রচুর পরিমান ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

দাঁত ও হাড়ের যত্নে
বেগুনে আছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই দুই উপাদান দাঁত, হাড় ও নখের জন্য খুব উপকারী। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম দাঁতকে করে মজবুত, মাড়িকে করে শক্তিশালী। নখের ভঙ্গুরতা রোধ করে।

জিঙ্কের ঘাটতি দূর করে
ডায়রিয়া হলে শরীরে প্রচুর জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দেয়। বেগুন জিঙ্কের ঘাটতি দূর করে। তবে ডায়রিয়া চলাকালিন সময়ে বেগুন খাওয়া ঠিক না। ডায়রিয়া ভালো হলে বেগুন খাওয়া উচিত।

চুল, নখকে মজবুত করে
বেগুন ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ (ক) সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর ভিটামিন ‘সি’ ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘কে’।

ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে
বেগুনের মধ্যে অনেক খাদ্য গুনাগুন বিদ্যমান থাকে। এই গুন ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে অনেক উপকার করে।সুত্রাং যেসব মহিলা নিয়মিত শাকসবজি, বিশেষত বেগুন খান তাদের ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় তুলনামূলকভাবে কম।


বেগুনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কাঁচা বেগুন খাওয়া উচিৎ নয়, তাতে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেগুন ভীষণ ক্ষতিকর। এছাড়াও, যাঁরা আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহে ভুগছেন, বেগুন তাঁদের জন্য ক্ষতিকর। বেগুন অনেকের গলদেশ ফোলা, বমি ভাব, চুলকানি এবং চামড়ার ওপর ফুসকুড়ির সমস্যা তৈরি করে থাকে।
এছাড়া, অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা উচিত। বেগুন অধিকাংশে মানুষের অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়। জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুনের তরকারি খাওয়া অনুচিত। ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পরে বেগুনের তরকারি খাবেন।

 


টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024