প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন কখনই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অথচ বিশ্বব্যাপী ফার্মেসিগুলোতে অবাধে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। যা উল্লেখযোগ্যহারে রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স ইনফেকশন সংক্রান্ত ঝুঁকির বিকাশ ও বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রতি চারজন রোগীর তিনজন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ফার্মেসিতে যান এবং প্রতি পাঁচটি ফার্মেসির তিনটিই প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে। অথচ প্রায়ই দেখা যায় যে, রোগীরা প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে।

এই গবেষণায় ২০০০-২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ২৪টি দেশের ফার্মেসিগুলো কর্তৃক অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির স্থানীয় ও আঞ্চলিক তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। যেখানে কেবল থাইল্যান্ড ছাড়া অন্য সব দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অবৈধ।

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাংকাশায়ার গবেষক ড. আশা অটা বলেন, গবেষণা থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ৭৮ ভাগ রোগী অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ফার্মেসিতে যায় এবং ৬০ ভাগ ফার্মেসি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

গবেষণায় বলা হয়, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে প্রায় ক্ষেত্রে রোগীরা ওষুধের পূর্ণ কোর্স শেষ করেন না। আবার অনেকে প্রয়োজন ছাড়াই ওষুধ সেবন করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অনর্থক ওষুধ তারা সেবন করেন। এভাবে অযৌক্তিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতার বিকাশ ও বিস্তার ঘটবে এবং সংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া, সিরিয়া, সৌদি আরব, ইথিওপিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় করা খুবই সহজ।

দেখা যায়, বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা উন্নয়নশীল দেশে বাস করে, যেখানে কমিউনিটির ফার্মেসিগুলোই চিকিৎসা সেবার প্রধান হাতিয়ার। বিশেষ করে গ্রামীন অঞ্চলের লোকজন চিকিৎসা সেবার জন্য প্রথমেই ফার্মেসিতে যায়। এসব ফার্মেসির কর্মচারীদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি অবৈধ এমন ওষুধও তারা অবাধে বিক্রি করে থাকেন।

কেবল উন্নয়নশীল দেশেই নয়, পর্তুগাল ও স্পেনের মত উন্নত দেশেও এ সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ওষুধের অতিরিক্ত সেবন এবং অপব্যবহারের কারণে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেসিসটেন্স’ বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়।

ড. আশা অটা বলেন, ‘অ্যামোক্সিসিলিন’, ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ সহ বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে, যা মারাত্মক সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অথচ প্রেসক্রিপশন ছাড়া এসব ওষুধ ব্যাপকহারে সেবন করা হচ্ছে। এতে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেসিসটেন্স’ সহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে।

কিংস্টন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মার্ক ফিল্ডার বলেন, এভাবে অবাধে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সমস্যা দূর করতে কমিউনিটির ফার্মেসিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যেসব ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই, সে সম্পর্কে তারা রোগীদের সচেতন করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের উচিত চিকিৎসক, সুবিধাভোগী ও জনগণ সবাইকে সচেতন করা। সবসময় অ্যান্টবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন নেই- বলেছেন প্রফেসর ফিল্ডার।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: