এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ভারত: পুলিশের গুলিতে নিহত ২০  

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। রাজ্যে রাজ্যে চলছে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ। সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়েও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন এনআরসি বিরোধীরা। সপ্তাহব্যাপী চলমান আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষে শিশুসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। দিল্লি, আসাম, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে কিশোর-যুবকসহ আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া আন্দোলনকারীদের দমাতে বিভিন্ন রাজ্যে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গসহ আটটি রাজ্যে সপ্তাহব্যাপী চলমান বিক্ষোভ সহিংসতার প্রেক্ষিতে শনিবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর আল জাজিরার।

ফরাসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আইনটি বাতিলের দাবিতে নতুন করে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে এসেছেন।

রয়টার্সকে ভারতীয় এক সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, জরুরি বৈঠকের জন্য সব মন্ত্রীকে তলব করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতার বিষয়ে আলোচনা করতেই এ বৈঠক ডেকেছেন তিনি।

এদিকে এনআরসি’র প্রতিবাদে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর উত্তর প্রদেশে শুক্রবার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজ্যটিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া শনিবার তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই ও বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাটনাসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার লোক নতুন করে এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। রাজধানী নয়াদিল্লির প্রধান সড়কে শনিবার ব্যাপক জমায়েত দেখা গেছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ধর্মভিত্তিক এই আইন নিয়ে অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে আইনটি পাশ করে মোদি সরকার। এই আইনে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ দেয়া হয়েছে। এরই প্রতিবাদে মুসলিমদের পাশাপাশি ক্ষোভে ফেঁটে পড়ে ভারতের সাধারণ জনগণ।

জানা গেছে, ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ২০ শতাংশের বসবাস উত্তর প্রদেশে। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র শিরীষ চন্দ্র বলেন, এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন নিহত হয়েছেন। সমস্ত ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

বারাণসী জেলা পুলিশ প্রধান প্রভাকর চৌধুরী বলেন, পবিত্র শহরটিতে শিশুসহ আড়াই হাজার লোক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এসময় এক শিশু নিহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ যখন বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে, সেসময় লোকজন পালানোর জন্য দৌড়াচ্ছিল। এতে পদদলিত হয়ে আরও অনেকেই আহত হন।

তবে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে ওই শিশুটি একটি গলির ভেতর খেলছিল, এসময় বিক্ষোভকারীদের পায়ে দলিত হয়ে সে মারা যায়।

এদিকে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকেও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামেও গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ছয়জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া শনিবার মধ্যদিল্লির যন্তরমন্তরে বেড়িকেড স্থাপন করেছে পুলিশ। সম্প্রতি এই রাজপথটি বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। জরুরি অবস্থা আরোপ ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও আন্দোলনকারীরা অনঢ় অবস্থান নিয়েছে দিল্লি জুড়ে।

শনিবারও দিল্লির বিক্ষোভে এলোপাতাড়ি গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। লাঠিপেটা ছাড়াও শত শত লোককে আটক করা হয়েছে। তবুও আইনটি বাতিলের আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী দিল্লির মূল সড়কে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান ব্যবহার ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির প্রতিবেদক এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় চালানো হচ্ছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশ সূত্র এএফপিকে ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করার কথা নিশ্চিত করেছে। আটকদের মধ্যে ৮ জন কিশোর রয়েছে।

 

টাইমস/এসএন/এইচইউ

Share this news on: