নোবেল করোনা ভাইরাস এবং তার জাতিগত পরিচয় নিয়ে করা কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী সিঙ্গাপুরের এক শিক্ষার্থী।
মি. জোনাথন মোক (২৩) নামের ওই শিক্ষার্থী বলেছেন যে, তিনি ২৪শে ফেব্রুয়ারি লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিট ধরে হাঁটছিলেন। তখন কিছু যুবকের বর্ণবাদী মন্তব্য এবং “করোনাভাইরাস” শব্দটি শুনতে পান। মি. মোক তখন তাদের দিকে ঘুরে তাকিয়েছিলেন, কারণ তিনি চাননি ওরা ভাবুক তিনি ভয় পেয়েছেন এবং এশিয়ানদের সহজেই বিব্রত করা যায়।
মি. মোক ইউসিএল পড়ার সময় লন্ডনে দু’বছর অবস্থান করেছেন, তবে গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি সিঙ্গাপুরে ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে মি. মোক বলেন, “আমি সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম ... আর এটা হাস্যকর বিষয় যে এশিয়ান হওয়ার জন্য আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে”।
মি. মোক বলেছিলেন যে, তিনি তাদের দিকে তাকানোর পরে যুবকদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলেছিল, “তুমি আমার দিকে তাকাতে সাহস করো না, তুমি…”। লোকটির উচ্চারণের কারণে তিনি শেষ শব্দটি শুনতে পাননি।
তারপরে তিন বা চারজন পুরুষ এবং একজন মহিলা তার দিকে এগিয়ে আসে। মি. মোক আরও বলেন, তাদের বয়স ২০ বছরের চেয়ে বেশি বলে তার মনে হয় নি, তবে তারা তার থেকে লম্বা ছিল। তারপর হঠাৎ করেই লোকগুলি তার মুখে ঘুষি মারে।
তিনি বলেন, আর একজন আক্রমণকারী তাকে লাথি মারতে চাইছিল আর কী ঘটছে তা অন্য পথচারীদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল।
যে ব্যক্তি তাকে লাথি মারার চেষ্টা করছিলে সে বলছিল, “আমি আমার দেশে তোমার করোনা ভাইরাস চাই না”। তিনি আরও জানান, তার নাক থেকে রক্তপাত শুরু হয়েছিল এবং পুরো ফুটপাথ জুড়ে রক্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
পুলিশ আসার আগেই এই দলটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মি. মোক বলেছেন যে, হামলার পরে তিনি নাক থেকে রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যস্ত ছিলেন। পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স তাকে ছেড়ে দেওয়ার পরে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, যে স্টোরটির সামনে তাকে আক্রমণ করা হয়েছিল তার মালিকদের সাথে তিনি কথা বলেছেন এবং পুলিশ এখনো সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেনি।
মঙ্গলবার লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে, তারা ২৪শে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে সংঘটিত জাতিগত হামলার তদন্ত করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে ঘুষি মারা হয়েছে এবং তার মুখে চোট লেগেছে। এখন উপলব্ধ সিসিটিভি ফুটেজ মূল্যায়নসহ সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে।
তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তদন্তের সহায়তার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
মি. মোক বলেন, তিনি রেগে গিয়েছিলেন কারণ তিনি জানতেন যে তিনি সেখানে সংখ্যালঘু। তবে তিনি আর লড়াই করতে পারেননি কারণ তারা তার চেয়ে লম্বা আর সংখ্যায় বেশি ছিল। তাছাড়া আগের একটি ঘটনায় তার ভেঙ্গে যাওয়া একটি আঙ্গুল তখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি।
তিনি আরো বলেন, জীবনে বহু বর্ণবাদী মন্তব্য তিনি শুনেছেন, তবে এমন ঘটনা আগে দেখেননি।
“আমার এমন বন্ধু আছে যারা অন্য ইউরোপীয় শহরের দোকানগুলিতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল কারণ তারা চীনা নাগরিক। সেখানে দোকান মালিকরা শুধু বলেছিলেন যে তারা করোনাভাইরাস চায় না,” তিনি মন্তব্য করেন। তথ্যসূত্র: সিএনএ.কম।
টাইমস/এনজে/এইচইউ