মৃত মালিকের জন্য হাসপাতালে প্রভুভক্ত কুকুরের ৩ মাস অপেক্ষা

চীনের উহানে প্রভুভক্ত এক কুকুর তার মালিকের জন্য হাসপাতালের সামনে টানা তিন মাস ধরে অপেক্ষা করেছে, কুকুরটি জানত না যে তার মালিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জিয়াও-বাও নামের এই কুকুরটির প্রতীক্ষার গল্প ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তা বহু মানুষকে অশ্রুসিক্ত করেছে।

অনেকেই ঘটনাটিকে জাপানিজ কুকুর হাচিকোর মর্মস্পর্শী কাহিনীর সাথে তুলনা করছেন। হাচিকো তার মালিকের জন্য একই জায়গায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিল।

ইতিমধ্যে জিয়াও-বাওয়ের ঘটনাটি নিউ ইয়র্ক পোস্টসহ বিশ্বের বহু প্রভাবশালী গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। গণমাধ্যম সূত্র জানায়, সাত বছর বয়সী জিয়াও-বাও তিন মাস ধরে উহানের তাইকং হাসপাতালে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল, কারণ সে জানতো না যে তার মালিক ভর্তি হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন পরে কোভিড-১৯ রোগটিতে মারা গেছেন।

অনুগত কুকুরটি প্রতিদিন হাসপাতালের লবিতে অপেক্ষা করত, হাসপাতালের কর্মীরা তার জন্য একটি আরামদায়ক গদির বন্দোবস্তও করে দিয়েছিলেন। এই কয়েক সপ্তাহ জীবন ধারণের জন্য লোকের দয়া করে দেয়া খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়েছে কুকুরটিকে। পরে অবশ্য পার্শ্ববর্তী একটি সুপারমার্কেটের পরিচালক উ কুইফেন জিয়াও-বাওকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

উ কুইফেন গণমাধ্যমকে বলেন, “এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আমি যখন কাজ করতে ফিরলাম তখন ছোট্ট কুকুরটিকে প্রথম লক্ষ্য করেছি। আমি কুকুরটিকে ভালোবেসে ‘জিয়াও বাও’ নামে ডেকেছিলাম। হাসপাতালের কর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, জিয়াও-বাও’র মালিক একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং পরে মারা যান। তবে জিয়াও-বাও এখনও বুঝতে পারছে না যে তার মালিক আর ফিরে আসবে না, তাই সে হাসপাতালে তার মালিকের জন্য অপেক্ষা করছে।”

মিস কুইফেন জানান, তিনি কুকুরটির সাথে পরিচিত হন এবং বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে চীন লকডাউন শিথিল করতে শুরু করার সাথে সাথে কুকুরটিকে তিনি তার দোকানে নিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, “প্রতি সকালে আমি যখন শপিং মল খুলতাম, তখন জিয়াও-বাও আমার জন্য অপেক্ষা করত। আবার দিন শেষে বাড়ি ফেরার সময় তাকে আমি আরেকবার দেখতে পেতাম।”

হাসপাতাল কর্মীরা গণমাধ্যমকে জানায়, তারা কুকুরটিকে দূরে ফেলে দিয়ে এসেছিল, কিন্তু অনুগত কুকুরটি আবারও ফিরে আসে এবং মালিকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

বেশ কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে, এই মাসের শুরুতে কুকুরটিকে উহান ক্ষুদ্র প্রাণী সংরক্ষণ সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে কুকুরটি পশু চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং শীঘ্রই সে তার নতুন বাড়িতে ফিরে যাবে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: