রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিতের আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। মঙ্গলবার জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে তিনি এ আহবান জানান। খবর রয়টার্সের।
বিবৃতিতে মিশেল বাশেলেট বলেন, রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা ওই জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
শরণার্থীদের বলপূর্বক ফেরত পাঠানো হলে তা ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মিশেল বাশেলেট ।
বিবৃতিতে তিনি আরও জানান, উত্তর রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের খবর এখনও আসছে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনে। এছাড়া এক লাখ ৩০ হাজারের মত রোহিঙ্গা এখন রাখাইনে সরকারি আশ্রয় শিবিরে আছেন। বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখায় আছেন প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। এই জনগোষ্ঠী এখনও চলাফেরা ও অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে তবেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।
১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে এই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এই প্রত্যাবাসন শেষ হবে।
এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লিও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার মত অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রত্যাবাসন স্থগিত করার আহবান জানিয়েছিলেন।
এর আগে গতবছর আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মধ্য নভেম্বর সময় ঠিক হয়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মঙ্গলবার অন্য দেশগুলোর কূটনীতিকদের এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।