সমকামী হলেই ব্রুনেইতে মৃত্যুদণ্ড

সমকামীদের পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন চালু করেছে দ্বীপরাষ্ট্র ব্রুনেই। খবর বিবিসির।

বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই বুধবার থেকেই সমকামিতার জন্য এই কঠিন শাস্তির বিধান কার্যকর করল দেশটি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট এই দেশটির সুলতান আজই এক ভাষণে ইসলামি শিক্ষা শক্তভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সুলতান হাসানুল বলকিয়া বলেছেন, ‘আমি আমার দেশে ইসলামি শিক্ষা শক্তিশালী হচ্ছে দেখতে চাই।’

সমকামিতাকে আগেই নিষিদ্ধ করেছিল ব্রুনেই এবং এর শাস্তি ছিলো দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

ব্রুনেইর সমকামিতায় বিশ্বাসী গোষ্ঠী এর মধ্যেই 'মধ্যযুগীয় শাস্তির বিধানে' উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

একজন বলছিলেন, ‘আপনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার পরিবার প্রতিবেশী, এমনকি রাস্তার কাছে যে নারী চিংড়ি ভাজা বিক্রি করছে তিনিও আপনাকে আর মানুষ হিসেবে গণ্য করছেন না।’

ব্রুনেই সুলতান শাসিত রাষ্ট্র এবং তেল গ্যাস রপ্তানি করে ধনী দেশে পরিণত হয়েছে।

৭২ বছর বয়সী সুলতান ব্রুনেই ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সির নেতৃত্বে রয়েছে যেটি বিশ্বের নামকরা কিছু হোটেলের মালিক। এর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের ডরচেস্টার ও লস এঞ্জেলসে বেভারলি হিলসের মতো হোটেল।

এ সপ্তাহেই হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনিসহ বেশ কয়েকজন তারকা এসব বিলাসবহুল হোটেল বর্জনের ডাক দিয়েছেন।

টিভি উপস্থাপক এলেন ডিজেনারেস মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের এখনি কিছু করতে হবে।’

লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ও আফ্রিকান স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা তাদের ভবনে ব্রুনেই গ্যালারির নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে।

ব্রুনেইতে ইসলামি আইনের প্রয়োগ এটাই প্রথম?

দেশটি প্রথম শরিয়া আইন চালু করেছিল ২০১৪ সালে। তবে তখন সাধারণ আইন ও শরিয়া আইন দুটিই চালু ছিল। সুলতান তখন বলেছিলেন যে নতুন পেনাল কোড কয়েক বছরের মধ্যেই আসবে।

জেল-জরিমানার মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধগুলোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে প্রথম ধাপ কার্যকর হয় ওই বছরই।

চার লাখ ২০ হাজার অধিবাসীর দেশটির মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মুসলিম।

দ্বিতীয় ধাপে শিরশ্ছেদ কিংবা পাথর ছুঁড়ে মারার মতো শাস্তির বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছিল। কিন্তু গত শনিবার শেষ পর্যন্ত শরিয়া পেনাল কোড বুধবার থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়।

এরপরই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ রাখার সমালোচনা করে। জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে ব্রুনেই এর এমন পদক্ষেপকে 'নিষ্ঠুর' আখ্যায়িত করেছে।

নতুন পেনাল কোডে আর কি কি শাস্তিযোগ্য?

এ ধরনের শাস্তির মধ্যে রয়েছে: গর্ভপাতের জন্য দোররা মারা ও চুরির জন্য হাত কেটে ফেলা।

এমনকি ১৮ বছরের কম বয়েসী মুসলিম শিশুকে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম পড়ানো বা পড়াতে প্রভাবিত করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আর এসব আইন বেশিরভাগই প্রযোজ্য হবে মুসলিমদের জন্য। অল্প কিছু আছে যা প্রয়োগ হবে অমুসলিমদের ওপরও।

ব্রুনেইয়ের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন

৪০ বছর বয়সী সমকামিতায় বিশ্বাসী এক ব্যক্তি বলছিলেন, তিনি এখন কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

তার মতে, নতুন পেনাল কোডের প্রভাব ইতোমধ্যেই অনুভূত হতে শুরু করেছে।

ফেসবুকে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্ট দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর চলতি বছরেই দেশ ত্যাগ করা সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষজন ভয়ার্ত’।

শাহরিয়ান এস শাহরিনি বিবিসি বলেন, ‘গে কমিউনিটি কখনোই ব্রুনেইয়ে ওপেন ছিল না। কিন্তু যখন গ্রিন্ডর (গে ডেটিং অ্যাপ) আসার পর সেটি গোপনে লোকজনকে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ করে দিল। কিন্তু এটি কেউ ব্যবহার করছে বলে শুনছি না।’

তবে একজন সমকামী ব্যক্তি বলছেন, তার বিশ্বাস আইনটি আসলে সেভাবে প্রয়োগ করা হবে না।

 

 

 টাইমস/এসআই

Share this news on: