ট্রাম্প-পুতিনের চেয়ে অনেক জনপ্রিয় এরদোয়ান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-কে পেছনে ফেলে বিবিসি আরবির এক জরিপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ানকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে দেখানো হয়েছে।

আর এই জরিপের ফলাফল নিয়ে তুরস্কের সরকারপন্থী পত্রিকা আকসাম এর প্রথম পাতায় শিরোনাম ছিল ‘সাতটি দেশে বড় ব্যবধানে এগিয়ে’।

এই জরিপটি মঙ্গলবার প্রকাশ করে বিবিসি আরবি। এতে এরদোয়ানকে প্রথম পুতিনকে দ্বিতীয় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তৃতীয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এমনকি পুতিন ও ট্রাম্পের সম্মিলিত গ্রহণযোগ্যতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ধারে কাছেও নেই।

মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ফিলিস্তিনসহ ১১টি দেশে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছে।

২০১৮ সালের শেষ দিকে থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের বসন্তকাল পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়।

আরব দেশগুলোর জনগন আমেরিকা, রাশিয়া এবং তুরস্কের নেতাদের কতটা ইতিবাচকভাবে দেখে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে।

প্রথম দেখায় এটা স্বাভাবিক মনে হতে পারে যে আরব দেশের মানুষ তাদের মতোই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরেকটি দেশ তুরস্কের নেতৃত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা।

কারণ তুরস্ক এবং আরব এ দুটো ভিন্ন জাতি। তাদের ভাষাও আলাদা। তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য কয়েকশ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার একটি বড় অংশ শাসন করেছে।

এছাড়া অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্ক থেকে রাতারাতি ইসলামি কায়দাকানুন বিলুপ্ত হয়ে যায়। আরবি বর্ণমালা উঠিয়ে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। যার ফলে রাতারাতি মূর্খ হয়ে যায় দেশটির বেশির ভাগ জনগণ।

এমনকি তুরস্কের সেনাবাহিনী ধর্মনিরপেক্ষতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। সে সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সে অঞ্চলে যৌথ সামরিক মহড়া করত তুরস্ক। কিন্তু সেসব দিন এখন আর নেই।

অটোমান সাম্রাজ্যের সৈনিকদের আদলে পোশাক পরিহিত গার্ডদের নিয়ে এরদোয়ান যখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করেন তখন বিষয়টি দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন।

২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় আবারো ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলেন তিনি। তুরস্কের অর্থনীতির স্বার্থে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তিনি।

বর্তমান তুরস্কে দেশটির সেনাবাহিনী পুরোপুরি বেসামরিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান প্রকাশ্যে আমেরিকার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'একটি সন্ত্রাসী দেশের নেতা' হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি গাজাকে একটি ‘উন্মুক্ত কারাগার’ বলে কড়া সমালোচনা করেন।

পর্যবেক্ষক মারওয়ান মুয়াশের মনে করেন, ইসরায়েলকে নিয়ে এরদোয়ানের এসব বক্তব্য ফিলিস্তিন এবং জর্ডানে তার ভক্ত বাড়িয়েছে।

তুরস্কের একজন বিশ্লেষক ফেহিম তাসতেকিন বলেন, এরদোয়ানের উঠে আসার গল্প তুরস্কের বহু মানুষকে আন্দোলিত করে। একটি ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেয়া এরদোয়ান তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ শাসক গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং তুরস্কের নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।

২০১১ সালে তথাকথিত আরব বসন্ত যখন তিউনিসিয়ায় শুরু হয় তখন বিক্ষোভকারীরা এরদোয়ানের পক্ষে স্লোগান দেন। এছাড়াও গাজার একটি সমুদ্র বন্দরে এরদোয়ানের ছবি প্রমাণ করে তার জনপ্রিয়তা কেমন!

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on: