ষাঁড় চুরি: উত্তেজিত ভারতীয় জনতার মহাসড়ক অবরোধ

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটুয়াতে একটি ষাঁড় চুরি যাওয়াকে কেন্দ্র করে এলাহি কাণ্ড ঘটেছে। চুরি যাওয়া ষাঁড় খুঁজে বের করতে ঘুম হারাম হচ্ছে পুলিশের।

ষাঁড় চুরি যাওয়ার প্রতিবাদে দিঘাগামী জাতীয় মহাসড়ক টানা দুই ঘণ্টা বন্ধ রেখেছিল স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। এতে আটকা পড়ে পর্যটকবাহী শত শত গাড়ি। ভাবছেন একটা ষাঁড় চুরি যাওয়ায় এমন করা কী মানে? এর কারণ হচ্ছে, এই ষাঁড় যেন তেন কোনো ষাঁড় নয়। গ্রামবাসী হিন্দুদের দেবতা মহাদেবের বাহন বলছে ষাঁড়টিকে।

জাতীয় সড়কের পাশেই বাড়ি রমাকান্ত প্রধান নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়ি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় প্রায় ১০ বছর ধরে একটি বিশাল আকৃতির ষাঁড় আছে। সেই ষাঁড়টিকেই কেউ চুরি করেছে। তার প্রতিবাদেই এলাকার মানুষ পথ অবরোধ করেছিলেন।’

এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ মাসের ১৮ তারিখ সকালে দিঘাগামী একটি গাড়ি ধাক্কা মারে ষাঁড়টিকে। গাড়ির ধাক্কায় পা ভাঙে তার। গুরুতর আহত হয় প্রায় ১০ মণ ওজনের পেল্লায় বৃষপ্রবর। সকলের আদরের ভোলার(চুরি যাওয়া ষাঁড়ের নাম) ওই হাল দেখে ঠিক থাকতে পারেননি এলাকার মানুষজন।

রমাকান্ত বলেন, ‘এলাকার ব্যাবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিৎসক ডেকে আনেন। তিনি চিকিৎসা শুরু করে আমাদের বলেন, ভোলাকে কোনও ছাউনির তলায় রাখতে হবে যাতে ক্ষতস্থানে পানি না লাগে।’

এরপর রমাকান্তের বাড়ির সামনেই এলাকার মানুষ ত্রিপল দিয়ে ভোলার ছাউনির ব্যবস্থা করেন। সেখানে রেখেই তার চিকিৎসা চলছিল। এলাকার মানুষের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে সবাই দেখতে পান যে, ওই ছাউনিতে ভোলা নেই।

রমাকান্ত বলেন, ‘রাত আড়াইটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছিলাম। তখনও ষাঁড়টি ওখানেই ছিল।’ অর্থাৎ ভোররাতেই ষাঁড়টিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই এলাকায় একটি চক্র সক্রিয়। যারা ষাঁড় এবং গবাদি পশু চুরি করে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।

রমাকান্ত বলেন, ‘এর আগেও আশে পাশের কয়েকটি গ্রামে ষাঁড় চুরির চেষ্টা হয়েছিল। স্থানীয়রা তাড়া করলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।’

এই খবর রটতেই গ্রামের শ দুয়েক মানুষ দিঘাগামী জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। প্রথমে পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে, গ্রামবাসীদের মারমুখী আচরণ দেখে সরে পড়েন। পরে ঘটনাস্থলে আসেন কাঁথি থানার আইসি নিজে।

গ্রামবাসীরা দাবি জানান, অবিলম্বে ‘অপহরণ হওয়া’ ষাঁড় খুঁজে দিতে হবে। গ্রেপ্তার করতে হবে দুষ্কৃতীদের।

দ্রুতই চুরি যাওয়া ষাঁড় ও অভিযুক্তদের দ্রুত খুঁজে বের করবে পুলিশ- এমন প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর দুই ঘণ্টা ধরে চলা অবরোধ তোলা হয়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পুলিশ আর রাস্তায় আটকে পড়া পর্যটকরা। কিন্তু গ্রামবাসীরা অবরোধ তোলার সময় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— ষাঁড় উদ্ধার না হলে আরও বড় আন্দোলনের পথে যাবেন তারা। অগত্যা মান বাঁচাতে পুলিশ এখন ষাঁড় খোঁজাতেই ব্যস্ত।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: