নারীদের চুল দেখতে টাকা লাগে!

আপনি কি কখনো এমন কাউকে দেখেছেন, যার সত্যিকার চুল মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা? না দেখাটাই স্বাভাবিক। তবে চীনের দক্ষিণাংশের গাংচি প্রদেশে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে নারীদের সত্যিকার চুল তাদের দেহের সমান বা তার চেয়েও লম্বা। আর তাদের সবারই চুল কালো। গ্রমাটির নাম হোয়াংলু। এর অধীবাসীরা সংখ্যালঘু আদিবাসী যারা ‘রেড ইয়াও’ নামে পরিচিত।

গিনেস বুকের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ চুলের অধিবাসীদের গ্রাম। যেখানে নারীদের চুল ২.১ মিটার বা ৬-৭ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল নারীদের এই লম্বা চুল স্বামী-সন্তান ছাড়া কেউ দেখতে পারে না। কারণ তারা এটাকে তাদের অন্যতম মূল্যবান এবং পবিত্র সম্পদ বলে মনে করেন।

হোয়াংলুদের বিশ্বাস লম্বা চুল তাদের দীর্ঘায়ু, সম্পদ ও সৌভাগ্যের প্রতীক। যার চুল যত লম্বা, সে তত সৌভাগ্যবান। কিন্তু একদিকে গ্রামের দরিদ্রতা, আর অন্যদিকে পর্যটকদের সমাগম। এই দুই কারণে এখন নারীরা স্বামী-সন্তান ছাড়াও অন্যদের চুল দেখার সুযোগ দেয়। তবে এটা কেবল অর্থের বিনিময়ে। অর্থের বিনিময়ে এ নারীরা পর্যটকদের সামনে নৃত্য করে এবং তাদের লম্বা চুল প্রদর্শন করে। আর এ কাজের মাধ্যমে এক একজন মাসে ৩০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন।

হোয়াংলু নারীরা তাদের জীবনে কেবল একবার চুল কাটে। আর এটা করে তাদের ১৮ তম জন্মদিনে। তারা কান বরাবর চুল কাটে যেন তাদের তরুণ ও সুদর্শন দেখায়। তবে কাটা চুল তারা কখনো বিক্রি করেন না। বরং এ চুল তারা তাদের দাদীর কাছে জমা রাখেন। বিয়ের সময় এটা তারা তাদের বরকে উপহার দেয় এবং এরপর থেকে এটা তাদের প্রতিদিনের চুল সাজানোর একটি অংশ হয়ে থাকে।

শুধু তাই নয়। সমাজে নারীদের বিভিন্ন সামাজিক পরিচয় অনুযায়ী তাদের চুলের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনও রয়েছে। যেমন- চুল যদি মাথার উপরে প্যাচ দিয়ে বৃত্তাকার থালার ন্যায় ডিজাইন করে রাখা হয়, তবে এটা বুঝাবে এই নারীর বিয়ে হয়েছে কিন্তু এখনও সন্তান হয়নি। আর এধরণের চুলের আগায় যদি ঝুঁটি বাঁধা থাকে, তবে বুঝাবে তার সন্তান আছে।

আর যারা স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখে তারা কুমারী। তারা বিয়ের জন্য বর খুঁজছে এবং বিয়ের পর কেবল তাদের স্বামীই এই চুল ও এর সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। তবে এটা তাদের প্রাচীন বিশ্বাস। বর্তমানে যাদের অন্তত একবার বিয়ে হয়ে গেছে তারা অন্যদেরকে চুল দেখতে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ সাল নাগাদ বিশ্বে চুলের শ্যাম্পুর বাজার মূল্য হবে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা চুলের অধিকারী এই হোয়াংলু নারীরা শ্যাম্পু শিল্পে এক পয়সাও অবদান রাখবে না। কারণ চুলের যত্নের জন্য তারা নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে। তারা ভাতের মাড়কে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাঁজন করে একধরণের উপাদান (রাইস-ওয়াটার শ্যাম্পু) তৈরি করে। যা ব্যবহার করে তারা পেয়ে থাকে শক্ত, মজবুত, লম্বা ও ঝলমলে কালো চুল।

হোয়াংলু নারীদের দাবি, তারা চুলের যে যত্ন নেয় তাতে ৮০ বছরের আগে তাদের চুল পাকে না, তথা সাদা হয় না। আর অনেক বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত তাদের এই চুলের যত্নে ব্যবহৃত ‘রাইস-ওয়াটার শ্যাম্পু’ এর গুণাগুণের প্রশংসা করেছেন। যেমন নিউইয়র্ক ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মার্গারেট ট্রে। যিনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উজ্জ্বল, ঝলমলে, মজবুত, কোমল ও রেশমী চুল পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।


আপনিও যদি হোয়াংলুর রেড ইয়াও নারীদের ন্যায় শক্ত, মজবুত, লম্বা ও ঝলমলে কালো চুল পেতে চান তবে ‘রাইস-ওয়াটার শ্যাম্পু’ বানানো শিখে নিন এবং কিছু দিন ব্যবহার করে দেখুন।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: