মাদক জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্তির কথা আমরা সবাই শুনেছি। এ থেকে মুক্তির জন্য পাড়া-মহল্লায় বহু মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র দেখা যায়। একইভাবে বিভিন্ন খাবারের প্রতিও অনেকের আসক্তি জন্মে।
আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে ২০ শতাংশ লোকের বিভিন্ন খাদ্যের উপর আসক্তি থাকতে পারে বা তারা খাওয়ার সময় আসক্তের মতো আচরণ প্রদর্শন করতে পারে। মোটা বা স্থূল লোকদের মধ্যে এই আসক্তির সংখ্যা বেশি।
খাবারের প্রতি আসক্তি খাবারের প্রতি আসক্ত হওয়াকে বোঝায়, যেভাবে মানুষ অন্য কোনো দ্রব্যের অতি ব্যবহারের ফলে সেই নির্দিষ্ট দ্রব্যটির প্রতি আসক্তি প্রদর্শন করে।
খাবারের আসক্তি রয়েছে এমন ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে, তারা বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে অক্ষম। তবে মানুষ যে কোনো খাবারের প্রতিই আসক্ত হয় না। কিছু খাবার অন্য খাবারের তুলনায় বেশি আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৫১৮ জন ব্যক্তির উপর আসক্তি জাতীয় খাবারের বিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তারা রেফারেন্স হিসাবে ইয়েল ফুড অ্যাডিকশন স্কেল (ওয়াইএফএএস) ব্যবহার করেছিলেন। এটি খাদ্য আসক্তিকে মূল্যায়ন করার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত নির্দেশক।
অংশগ্রহণকারীদেরকে ৩৫টি খাবারের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল, যাতে প্রক্রিয়াজাত ও অপ্রক্রিয়াজাত দুই ধরণের খাবারই ছিল। ৩৫টি খাবারের মধ্যে প্রত্যেকটিতে কতটা আসক্তি অনুভূত হয়, সে বিষয়ে তারা ১ থেকে ৭ স্কেলে মান নির্ধারণ করেছেন।
এই সমীক্ষায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭-১০ শতাংশের পূর্ণ বর্ধিত খাদ্যের আসক্তি ধরা পড়ে। এছাড়াও, ৯২% অংশগ্রহণকারী কিছু খাবারের প্রতি আসক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। তারা বারবার চেষ্টা করেও সেসব খাবার খাওয়া ছেড়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
গবেষণা অনুযায়ী, কোন খাবারগুলি বেশি আসক্তি সৃষ্টি করে এবং কোন খাবারে আসক্তির মাত্রা কম চলুন তা জেনে নিই-
বেশি আসক্তিযুক্ত খাবার
স্বাভাবিকভাবেই বেশি আসক্তির জন্য দায়ী খাবারগুলির বেশিরভাগ খাবারই প্রক্রিয়াজাত। এই খাবারগুলিতে সাধারণত চিনি বা ফ্যাট বা উভয়ই বেশি থাকে। প্রতিটি খাবারের প্রদত্ত গড় স্কোর, ১ (মোটেও আসক্তি নয়) থেকে ৭ (অত্যন্ত আসক্তিযুক্ত) এর স্কেলে দেয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো- পিজ্জা (৪.০১), চকোলেট (৩.৭৩), চিপস (৩.৭৩), কুকিজ (৩.৭১), আইসক্রিম (৩.৬৮), ফ্রেঞ্চ ফ্রাই (৩.৬০), চিজবার্গার (৩.৫১), সোডা (ডায়েট নয়) (৩.২৯), কেক (৩.২৬), পনির (৩.২২), বেকন (৩.০৩), চিকেন ফ্রাই (২.৯৭), রোল (২.৭৩), পপকর্ন (মাখন) (২.৬৪), প্রাতরাশের সিরিয়েল (২.৫৯), আঠালো মিছরি (২.৫৭), স্টেক (২.৫৪) ও মাফিনস (২.৫০)।
কম আসক্তিযুক্ত খাবার
কম আসক্তিযুক্ত খাবারগুলি বেশিরভাগ অপ্রক্রিয়াজাত খাবার। সেগুলো হলো- শসা (১.৫৩), গাজর (১.৬০), মটরশুঁটি (১.৬৩), আপেল (১.৬৬), বাদামি চাল (১.৭৪), ব্রোকলি (১.৭৪), কলা (১.৭৭), সলোমন (১.৮৪), ভুট্টা (মাখন বা লবণ ছাড়া) (১.৮৭), স্ট্রবেরি (১.৮৮), গ্রানোলা বার (১.৯৩), পানি (১.৯৪), ক্র্যাকারস (২.০৭), প্রেটজেল (২.১৩), মুরগির সিনা (২.১৬), ডিম (২.১৮) ও বাদাম (২.৪৭)।
জাঙ্ক ফুড কেন আসক্তি সৃষ্টি করে?
প্রক্রিয়াজাত খাবারে এমন কিছু জৈব রাসায়নিক কারণ রয়েছে, যার কারণে মানুষ তাদের খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বিশেষত চিনি ও ফ্যাট এর জন্য দায়ী।
এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলির স্বাদ বাড়ানোর জন্য হাইপার প্যাল্যাটেবল করা হয়। এগুলিতে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরিও থাকে এবং খাবারগুলি রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। এসব কারণে খাবারগুলি অতিরিক্ত আসক্তি তৈরি করে। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম
টাইমস/এনজে/জিএস