শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তিরস্কৃত হলেন কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কুইবেকের শিক্ষামন্ত্রী জেন ফ্রাঙ্কুইস রবার্জ। মালালার সঙ্গে ছবি তুলে শিক্ষামন্ত্রী সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পর বিষয়টি ব্যাপকভাব সমালোচিত হচ্ছে। কথা ও কাজের সঙ্গে মিল না থাকায় মন্ত্রী বরার্জকে অনেকে ‘ভণ্ড’ বলেও গালি দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মালালা ইউসুফজাই একজন শিক্ষা প্রচারক। মূলত আফগানিস্তানে হুমকি উপেক্ষা করে স্কুলে যাওয়া এবং তালেবানদের হাতে গুলি বর্ষণের শিকার হওয়া তাকে নোবেল এনে দিয়েছে। এখন তিনি বিশ্বব্যাপী শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত। তবে তার সঙ্গে ছবি তুলে কুইবেকের শিক্ষামন্ত্রীতো কোনো অন্যায় করেননি! এটিতো খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। হ্যা, ঘটনাটি স্বাভাবিক। কিন্তু বিপত্তি ঠিক অন্য যায়গায়।
ছবিতে দেখা যায়, মালালা ইউসুফজাই মাথায় একটি সাদা ওড়না পরেছেন। যেটি অনেকটা স্কার্ফের মতো মনে হয়। বিতর্কের সূত্র এখানেই। কেননা কুইবেক প্রদেশের সরকার সম্প্রতি তার সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি বিতর্কিত আইন পাস করেছে। যার মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষকরা কোনো ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে পারবেন না। মালালার এ পোশাককে ধর্মীয় পোশাক আখ্যা দিয়ে সমালোচকরা বলছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি এড়িয়ে যান কোন যুক্তিতে?
মন্ত্রী জেন ফ্রাঙ্কুইস রবার্জ বলেছেন, মালালার সঙ্গে তিনি শিক্ষায় অন্তর্ভূক্তিকরণ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
২০১২ সালে মালালা ইউসুফজাই আফগানিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকায় তালেবানদের হামলার শিকার হন। স্কুলে যাওয়ার অপরাধে তাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা। গুলি তার মাথায় লাগে কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে তার ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বিশেষ করে শিক্ষাখাতে এখন তিনি বিশ্বব্যাপী আলোচিত এক নাম।
গত জুন মাসে কুইবেক কর্তৃপক্ষ ধর্মনিরপেক্ষ আইন পাস করে। যে আইনে দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা কোনো সরকারি কর্মচারি পাগড়ি, হিজাবসহ এমন কোনো পোশাক পরিধান করতে পারবে না যাতে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হয়। ওই বিলে বিচারপতি, পুলিশ অফিসার, শিক্ষকসহ আরো কিছু সরকারি অফিসারের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। যদিও আইনটি পাস হওয়ার সময় প্রদেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এবং এখনো সে বিতর্ক শেষ হয়নি।
বিল পাসের সময় কোনো ধর্ম বা জাতিকে সরাসরি উল্লেখ করা না হলেও সমালোচকরা একে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরোপিত বিল বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন-এর ফলে মুসলমান নারীদের প্রতি বৈষম্য এবং অনৈতিক চাপ প্রয়োগের পন্থা বেছে নিয়েছে কুইবেক প্রশাসন।
এদিকে মালালার সঙ্গে পোজ দেওয়ায় অনলাইনে সমালোচনাকারীরা মন্ত্রীকে ‘ভণ্ড’ বলেও গালি দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী রবার্জ মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে মিলিত হন ফ্রান্সে। সেখানে থাকা অবস্থায় টুইটারে সাংবাদিক সেলিম নাদিম ভালজি শিক্ষামন্ত্রী জেন ফ্রাঙ্কুইজ রবার্জকে কুইবেকে গিয়ে শিক্ষা দানে মালালার আগ্রহের কথা জানান।
এমন প্রশ্নের উচ্ছ্বসিত জবাব দিয়েছিলেন মন্ত্রী রবার্জ। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাকে বলব যে, কুইবেকে এটি একটি অসাধারণ সম্মান হবে। তবে এটিও বলবো যে, কুইবেক, ফ্রান্স (যেখানে আমরা এখন থাকি) এবং অন্য কোনো সহনশীল দেশে, শিক্ষকরা শিক্ষাদানের সময় ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে পারবেন না।
টাইমস/এমএস