ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বৃহস্পতিবার আদালতে বলেছেন, সামাজিকভাবে এই মামলার কারণে হেয় হয়েছি অনেক। আমার ১৫ বছরের ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। আমি ১০টা খুন করলেও এত বড় সাজা হত না। ৭০/৭৫ বছর বয়সী আমার মা, আমার মেয়ে এই ঘটনায় খুব মর্মাহত হয়েছেন।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও করা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মোয়াজ্জেমের বিচার চলছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সামনে তিনি বললেন, ‘এই অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি।’
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমি কী অপরাধ করলাম। উনি (বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন) যদি ভিডিওটা পুরোপুরি দেখতেন তবে এই মামলা করতেন না। উনি ভিডিও ঠিকমত দেখেনই নাই।’
‘গত ৬/৭ মাস আমাকে সারা বিশ্বে কলঙ্কিত করা হয়েছে। চাকরি থেকে আমাকে রংপুরে ক্লোজ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল পর্যন্ত হয়েছে। অথচ আমি এই মামলায় আইওকে (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছি। আমার মোবাইল তার কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে এমন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মামলা পড়েছে যিনি আইন অনুযায়ী তদন্ত করেননি। উনি (আইও) নিজেই তদন্তের প্রয়োজনে ছবি তুলেছেন।’
জবানবন্দি নেওয়ার সময় তদন্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমের কোনো ভিডিও করেছেন কি না- বিচারকের এমন প্রশ্নের উত্তরে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘না। আমার থানায় সিসি ক্যামেরা আছে। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে যে স্ক্রিন শট দিয়েছি, সেখানে তারিখ দেখে তিনি ঘটনার সময় উল্লেখ করেছেন। অ্যাডিশনাল ডিআইজি ফায়েজ স্যার আমার কাছ থেকে ভিডিও নিয়েছে। সেটা আমি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছি। আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি না। শুধু ঘটনার পরদিন ৯ তারিখ রাতে এসপি সাহেব ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। দুই দিন পরই আমি তা আবার ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিই।’
বিচারক তখন জিজ্ঞাসা করেন, মামলা দায়ের বা তদন্তের জন্য ভিডিও করার কোনো নির্দেশনা আইনে আছে কি না।
জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সেরকম কোনো আইন নেই। তবে আপডেটেড টেকনোলজির কারণে আমরা অনেক কিছু ভিডিও করে রাখি। এটা আমাদের প্র্যাকটিস, এক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কিছু নির্দেশনাও আছে।’
বিচারক বলেন, ‘বাদী, সাক্ষী তো দূরে থাক, গ্রেপ্তারের পর আসামির ভিডিও বা ছবি না তোলার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনাই তো আছে।’
তখন মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জি, তা আছে। এগুলো ভিডিও করে আমরা কাউকে দিই না। শুধুমাত্র আদালত চাইলে সাক্ষ্য হিসেবে তা উপস্থাপন করা হয়। আমরা এটা ফেসবুক বা ইউটিউবে পোস্ট করি নাই। কীভাবে সোশাল মিডিয়ায় গেছে তা আমি জানি না।’
পরিদর্শক মোয়াজ্জেম এসব বক্তব্য সবিস্তারে লিখিত আকারেও আদালতে দাখিল করেন। তবে তিনি কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলে জানান তার আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ। আদালত আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করেন।
টাইমস/এসআই