নতুনদের উদ্যোম ও পুরনোদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী সোমবার নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে যাচ্ছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয়ের পর নতুন-পুরানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নতুন সরকারের যাত্রা শুরু করবেন।
এদিকে, মন্ত্রিসভা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো না হলেও এবারের মন্ত্রিসভায় চমক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার মন্ত্রিসভা গঠন সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। আমার কেন যেন মনে হয় বিশাল একটা চমক আসবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের পথচলা। তবে বিশাল জয়ের সঙ্গে বিশাল চমকও থাকতে পারে।’
কাদের বলেন, ‘এ মন্ত্রিসভায় আমি ঠিক বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় বিপুল বিজয় তো বিপুল প্রত্যাশা। জনগণেরও এখানে একটা প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশার প্রতিধ্বনিতো করতে পারেন একজনই (শেখ হাসিনা)।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবিনেটের বিষয়টা সম্পূর্ণ তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিষয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর এরিয়া, এখানে অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী সোমবার সাড়ে তিনটায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’
নতুন মন্ত্রীদের কোনো তালিকা পেয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শপথ অনুষ্ঠানের খবর পর্যন্তই জানি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
উল্লেখ্য, গত রোববার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীরা ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই ২৫৭টি আসনে বিজয় অর্জন করেছে। পরে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নতুন এমপিরা শপথগ্রহণ করেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী যথারীতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রাষ্ট্রপতিও প্রধানমন্ত্রীকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এরপর থেকেই চলছে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ এবং নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নানামুখী আলোচনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ টেকনোক্র্যাট কোটায় নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে চারজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- আবুল মাল আবদুল মুহিত, মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম।
পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় যারা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল লোটাস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ড. বীরেন শিকদার, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নতুনদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহম্মদ ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, মুস্তাফা জব্বার, সাবের হোসেন চৌধুরী, ফজলে হোসেন বাদশা, সাংবাদিক শফিকুর রহমান, টিপু মুনশি, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, দবিরুল ইসলাম, মৃণাল কান্তি দাস, আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক), ডা. দীপু মনি, নাজমুল হাসান পাপন, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. হাবিবে মিল্লাত, একেএম রহমতুল্লাহ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মাশরাফি বিন মর্তুজা, ইসরাফিল আলম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নাহিম রাজ্জাক, সিমিন হোসেন রিমি ও জুয়েল আরেংর নাম আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অফিসিয়াল কাজ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শনিবার (৫ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খোলা রয়েছে। এরই মধ্যে সচিবালয়ে নিজ দফতরে এসেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এছাড়াও এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ও আইন মন্ত্রণালয় সচিবরাও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছেন। তারা নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের ফাইল তৈরির কাজসহ আনুষাঙ্গিক কাজগুলো সম্পন্ন করে রাখছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। তাই এ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো গুছিয়ে রাখার জন্যই আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করছি।
টাইমস/ কেআরএস