করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। এই অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সারাদেশের মত একই অবস্থা চলছে ঝিনাইদহ জেলাতেও।
করোনা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করায় ঝিনাইদহের গ্রামের মানুষও ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুলিশ ফাঁড়ি থাকায় হোম কোয়ারেন্টাইন সফল করা সহজ হচ্ছে। তবে শহর এলাকার মানুষদের বাগে রাখতে প্রশাসনকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ নিজে পথচারী, যানবাহন ও দোকানপাটের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাঠে থাকছেন তিনি।
এদিকে জনপ্রতিনিধিরা মাইকযোগে করোনার বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সদস্যরা জেলা পুলিশ প্রধানের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ফ্রি মাস্কসহ করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
তবে জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম।
মঙ্গলবার সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখো গেছে, জেলার বিভিন্ন গ্রাম হাট-বাজার নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। থমকে গেছে জনপদের কোলাহল। শিশুরাও ছেড়ে দিয়েছে খেলার মাঠ। খেটে খাওয়া মানুষেরা এক মুঠো অন্নের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় কয়েক জনের সঙ্গে। তাদের একজন আরতি রানী। কথা হয় তার সঙ্গে। জেলা শহরের পাগলাকানাই সড়কে ভাড়া বাড়িতে বাস করেন তিনি। তার স্বামী ধোপার কাজ করে। এখন কাজ নেই, না খেয়ে কাটছে তাদের দিন। ঘরে যা ছিল ফুরিয়ে গেছে। আরেকজনের নাম বিপুল। তিনি কাজ করেন কম্পিউটারে। দিনে যা আয় হয় তাতেই সংসার চলছিল তার। সে জানায়, পরিবার পরিজন নিয়ে বড় কষ্টে কাটছে তার দিন। সে কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে পারছেনা।
ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটির সময় সীমা বাড়ানো হয়েছে। ফাঁকা রাস্তাঘাট। এ অবস্থায় বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্তরা। কার কাছে হাত পাতবেন তারা? কে দেবে তাদের সাহায্য। ঝিনাইদহ জেলার কাউকে খাদ্য সংকটে পড়তে হবেনা বলে জানিয়েছেন জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, প্রতিদিন নানা শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও ঝিনাইদহে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এসময় জনপ্রতি ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, হাফ লিটার তেল ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জনসমাগম, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও দোকানপাট বন্ধ করার পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত ক্ষুধার্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারের বরাদ্দকৃত খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। তাকে সাহায্য করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদরুদুজা সুভসহ সহকারী কমিশনারবৃন্দ।
এছাড়া বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম দুলাল নিজ অর্থে সারা জেলার ২০ হাজার কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ শুরু করেছেন। ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই নিজ নির্বাচনী এলাকায় খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দের পক্ষ থেকেও পাড়া মহল্লায় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হতদরিদ্র পাশে থেকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সংকটময় সময়ে কাউকে না খেয়ে থাকতে হবেনা। এই সময়ে বিত্তবানরাও সাড়া দিয়েছেন।
টাইমস/এইচইউ