বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ গ্রেপ্তারের পর কারাগারে

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পরপরই মাজেদকে প্রিজনভ্যান করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিস) ইউনিটের একটি বিশেষ দল মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক দণ্ডিত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জাফর হোসেন বলেন, আদালতের আদেশের পরপরই মাজেদকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের আগে মাজেদ কোথায় ছিলেন তা পুলিশের জানা ছিল না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল। এ খবর পেয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এই পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় আছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন।

নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন।

কিন্তু এরপর এনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচার-প্রক্রিয়া। শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি। দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়মুক্ত হয় বাংলাদেশ।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

 

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: