এইচএসসির পাঁচ বছর আগেই অনার্স পাস পাপুল!

অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কুয়েতে বন্দী রয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। গত ৬ জুন দেশটির অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাপুলের নামে জমা থাকা বিপুল অর্থ জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানব ও অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।

এদিকে পাপুল নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে পাপুল দাবি করেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। আবার সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৯৮৭ সালে। এমনকি নিউইয়র্ক সিটি কলেজে তিনি অর্থনীতিতেও পড়াশোনা করেছেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় পড়াশোনার কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর উল্লেখ করলেও জমা দিয়েছেন স্নাতক পাসের সনদ।

প্রশ্ন উঠেছে এইচএসসি পাশের আগেই তিনি কিভাবে স্নাতক (অনার্স) পাস করেছেন। তাই শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো ক্ষেত্রে পাপুল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাপুল আসলে এসএসসি পাসও করেননি।

হলফনামায় পাপুল লিখেছেন, সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্সে স্নাতক করেছেন তিনি। শিক্ষাবর্ষ ছিল ১৯৮৬-১৯৮৭। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, কলেজটিতে ওই বিষয় পড়ানোই হয় না।

এদিকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই হলফনামার সঙ্গে পাপুলের জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার ওই সনদ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ওই দিন শুনানি হয়নি।

ফয়েজ ভূঁইয়ার আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগান বলেন, পাপুল শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার তথ্য দিয়েছেন কিন্তু জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এই স্নাতক সনদটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে তিনি এসএসসি পাসও করেননি।

পাপুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রায়পুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে পাপুল লেখাপড়া করেননি। ১৯৮৭ সালের আগেই পাপুল চাকরির জন্য কুয়েত চলে যান। সেদেশে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৭ সালে সিয়েরা লিয়ন গিয়ে লেখাপড়ার দাবি হাস্যকর। তিনি যেসব শিক্ষাগত সনদ সংগ্রহ করেছেন সেগুলো শতভাগই ভুয়া।

তিনি বলেন, পাপুল তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাও মিথ্যা।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: