লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ চার বছর পর হত্যা মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
সোমবার সকালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযোগপত্রটি অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পরই তা আদালতে দাখিল করা হবে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে অভিযোগপত্রে আসামি করা হচ্ছে মোট ছয়জনকে। জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কথিত নেতা সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক এবং ‘উগ্রপন্থি ব্লগার’ সাফিউর রহমান ফারাবীও রয়েছেন এই ছয়জনের মধ্যে।
তবে হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে ১২ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেলেও তাদের মধ্যে পাঁচজনের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্ত পাওয়ার পর ১১ জনকে চিহ্নিত করে। এর বাইরে র্যাবের হাতে গ্রেফতার ছিলেন সাফিউর রহমান ফারাবী। তিনি অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্ররোচনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। এ কারণে এই মামলায় তাকে প্ররোচনাকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সাফিউর ছাড়াও ১১ জন এই হত্যার ঘটনায় জড়িত। এর মধ্যে সবার নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। ছয়জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এই ছয়জনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগপত্র দিচ্ছি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আরও বলেন, এই হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান শামস এবং আবু সিদ্দিক শামস তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা তাদের নিজেদের দায়িত্ব এবং অন্য কারা কারা এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন, কীভাবে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে, কেন সংঘটিত হয়েছে, অর্থাৎ মোটিভ সবকিছুই তারা তাদের জবানবন্দিতে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ দেশে আসেন। ওই বার একুশে বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি মেলা থেকে ফেরার সময় রাত সাড়ে ৮টায় টিএসসি চত্বরের সামনে স্ত্রী বন্যা আহমেদসহ হামলার শিকার হন অভিজিৎ। হামলায় অভিজিৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চাপাতির আঘাতে বন্যার বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ব্লগার অভিজিৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন তিনি।
ঘটনার পর শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অধ্যাপক অজয় রায়। দীর্ঘ দিনেও ছেলের হত্যার বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আসছিলেন তিনি।
টাইমস/এইচইউ