পুরান ঢাকার ধোলাইখালে সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ পিকআপ ও ট্রাকস্ট্যান্ড। আর ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে পুরনো লোহা-লক্কর, টায়ার-টিউব এবং ভাঙারির দোকান। ফলে সড়কটি তার আসল চেহারাই হারিয়ে ফেলেছে।
অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় মূল সড়কটি অনেক সরু হয়ে গেছে। এ কারণে সারাক্ষণই এই সড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ধোলাইখালের দুই লেনের এই সড়কটির এক পাশের ২৫ ফিটের মধ্যে সাত ফিট জুড়েই পিকআপ ও ট্রাক রাখা হয়েছে। সড়কের উভয়পাশের ফুটপাতের অংশও দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট খোলা হয়েছে।
বানিয়ানগর পঞ্চায়েত কমিটি ফটক এলাকা থেকে লালমোহন সাহা স্ট্রিটের মার্কেট পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৫০টি ট্রাক ও ২৫টি পিকআপ রাখা। আর দয়াগঞ্জ নতুন সড়কের মাথা থেকে ওনারিন্দা সড়কে আছে আরও প্রায় ২০টি ট্রাক। এতে এ সড়কের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগই দখল হয়ে গেছে।
এছাড়া ধোলাইখাল মূল ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতর আছে প্রায় দেড়শ ট্রাক ও পিকআপ। এসব মালবাহী যান কিছুক্ষণ পরপরই স্ট্যান্ড থেকে যাতায়াত করছে। এতে বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে দয়াগঞ্জ সড়কে যাতায়াতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর এ এলাকাটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও প্রধান পাইকারি মার্কেট। ব্যস্ততম এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট আটকে থাকায় অতিষ্ট পথচারী,ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে ধোলাইখাল এলাকায় যানজট নিরসনে ট্রাকস্ট্যান্ডটি একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন এ সড়কের ফুটপাত থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে। তবে শ্রমিকদের বাধা পেয়ে ডিএসসিসি অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ধোলাইখালের মূল পিকআপ ও ট্রাকস্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ধোলাইখালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় পাঁচ একর জমি দখল করে সেখানে ট্রাক ও পিকআপ রাখা হয়েছে। এসব যানবাহনের মালিকরা ডিএসসিসি থেকে কোনো ধরনের লিখিত অনুমতি নেয়নি।
সূত্র আরও জানায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে ধোলাইখালে সিটি করপোরেশনের ওই জমিতে ট্রাক ও পিকআপ রাখা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ট্রাক ও পিকআপের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পরে ১৯৯৮ সালের দিকে এই স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে একটি পাঁচ তলা শরীরচর্চা কেন্দ্র ও গ্রন্থাগার নির্মাণের দরপত্র চূড়ান্ত করে ডিএসসিসি। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বাধার কারণে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে এখানেই গড়ে উঠেছে অবৈধ এ স্ট্যান্ড।
ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি এখন এলাকাবাসীর ‘গলারকাটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করে কবে যানজট সমস্যার সমাধান হবে সেই অপেক্ষায় আছেন এলাকাবাসী। যদিও এখনো পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধানের আশ্বাস তারা পাননি।
স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম অভিযোগ করে বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, সড়কে ট্রাক ও পিকআপ রাখায় ফুটপাত ও সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে যায়। যে কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধোলাইখাল সড়ক ও ইংলিশ রোডে যানজট লেগে থাকে। এতে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি সময় ব্যয় হয়।
ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকায় যাতায়াতে এ সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ট্রাক স্ট্যান্ডের কারণে ধোলাইখালে নিত্যদিন যানজট লেগে থাকে। এতে করে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ধোলাইখাল এলাকার সড়ক ও ফুটপাতের অবৈধ দখলের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তবে লোকবলের অভাবের কারণে দখল ঠেকানো যাচ্ছে না।
ঢাকা ট্রাক-মিনিট্রাক ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মাসুদ রানা বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি আর স্ট্যান্ডের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কিছু ট্রাক ও মিনিট্রাক সড়কের পাশে পার্ক করা হয়।
‘তবে আমরা চাই এখান থেকে উঠে যেতে। কিন্তু আমাদের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো একটি জায়গা ঠিক করে রেখেছে। তবে দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনির পাশের জায়গাটি বরাদ্দ করা হলে দ্রুতই এখান থেকে চলে যাব।’
টাইমস/টিআর/জেডটি