সংরক্ষণ হচ্ছে না মুঘল আমলের বড় কাটরা

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পৌনে চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মোগল স্থাপত্য বড় কাটরার ভেতরে ও বাইরে ভবন নির্মাণ ও দখলের কাজ চলছে। তাই প্রাচীন আমলের তৈরি করা পুরান ঢাকার চকবাজারের বড় কাটরা এখন আর সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নীতিমালায় বলা আছে, ঐতিহাসিক যেকোনো স্থাপনার আশপাশের ২৫০ মিটার এলাকা ‘বাফার জোন’ হিসাবে চিহ্নিত হবে। যেখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ নিষিদ্ধ।

বিভিন্ন বহুতল ভবনের প্রভাবে আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শন। ফলে এই নিদর্শন খুঁজে বের করতে ঐতিহ্যপ্রেমীদের বেশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বড় কাটরার ভবনগুলোর অনেক জায়গায় চুন সুরকি ব্যবহার না করে সিমেন্ট ও বালি দিয়ে প্ল্যাস্টার করা হয়েছে। পুরাতন ভবনের পাশে নতুন ভাবে মসজিদ করা হয়েছে। আর ভবনটির তৃতীয় তলায় সিমেন্ট, বালি ও ইট দিয়ে নতুন নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় স্কুলও ভবনটির দক্ষিণ পাশে করা হয়েছে এমনভাবে যে তার দক্ষিণ পাশের তোরণ দেখা যাচ্ছে না।

সুউচ্চ মধ্যবর্তী খিলানরূপী প্রবেশ তোরণযুক্ত ইমারতের নিদর্শন চিহ্নের ধ্বংসাবলীর মধ্যে এই বড় কাটরাটির প্রকৃত কোনো অবয়ব চোখে পড়ে না। চার্লস ডি অয়েলীর (১৮২৪-৩০) আঁকা স্কেচ থেকে ধারণা করা হয় যে এক সময় এই ইমারত বিশেষ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত নিদর্শন রূপে ছিল। এখন তা কেবলই ইতিহাস।

এ বিষয়ে আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, জায়গাটি এখন ৬০ ভাগই মাদ্রাসা ও মসজিদের দখলে। আর বাকি অংশে আবাসিক ভবন, কারখানা ও দোকানপাট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বড় কাটরার অবস্থা নাজুক। এর ভেতরে-বাইরে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই নিদর্শন সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি কেউ। আমরাও এই নিদর্শন টিকে রাখতে এগিয়ে আসলে কি হবে? অন্যরা কেউ এগিয়ে আসে না।

এর আগে ২০০৯ সালে সরকারি গেজেটে ৯৩টি ভবন ও চারটি এলাকাকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সেই গেজেটে বড় কাটরা’র কথাও উল্লেখ্য রয়েছে। তবে চকবাজারের মধ্যে থাকা সেই স্থাপনাও বাদ যাচ্ছে না ধ্বংসের হাত থেকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত শতাধিক বছরের পুরনো স্থাপনাকে ঐতিহ্য সংরক্ষণের তালিকায় রাখা হয়। ওই তালিকাভুক্ত স্থাপনা ভেঙে নতুন স্থাপনা গড়তে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে ঐতিহ্য সংরক্ষণের তালিকায় থাকা এসব স্থাপনা ভাঙতে হলে রাজউকের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন।

২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজউকের এক গেজেটে বলা হয়, ‘নগর উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন ব্যতীত তালিকাভুক্ত হেরিটেজ ভবন, স্থাপনা অপসারণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পুনঃনির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল।’

এ বিষয়ে রাজউকের পরিকল্পনা সদস্য সৈয়দ নূর আলম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, এসব অবৈধ ভবন সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। তাই আমরাও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নই।

প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য আইন-২০০৪ এর খসড়া আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো স্থাবর প্রত্নসম্পদ সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে (ভূমি মালিকানা যার থাকুক না কেন) তা ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন, ক্ষতিসাধন করা হলে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) রাখী রায় বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, বড় কাটরার ছবি যেটা আপনি দেখাচ্ছেন তা আমাদের জানা ছিল না। আর ওই জায়গার দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি তো মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। তাই এই জায়গাটির সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে বিষয়টি দেখছি।

এ সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান খোদেজা বেগম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, বড় কাটরা ঢাকা শহরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই স্থাপনাটি দেখার মতো। কিন্তু তাতে বহু আগে থেকেই মসজিদ ও মাদ্রাসা করার কারণে আমরা নারীরা সেখানে প্রবেশ করতে পারি না।

তিনি বলেন, সবার আগে স্থাপনাটি ও তার চারপাশ থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। এরপর আইন অনুযায়ী সংস্কার করে এর সংরক্ষণ করতে হবে।

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: