চট্টগ্রামের ৯৩ শতাংশ বহুতল ভবনে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম নগরীতে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত বহুতল ভবনগুলোর ৯৭ শতাংশ আগুনের ঝুঁকিতে আছে। ৯৩ শতাংশ বহুতল ভবনের কোন রকম অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আইন থাকা সত্ত্বেও ৯৭ শতাংশ ভবন ফায়ার সার্ভিসের বসবাসের উপযোগী ছাড়পত্র নেয়নি। শতভাগ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়েছে এমন ভবন একটিও নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে সবক’টি ভবন। এমন তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বহুতল ভবনের পরে চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বিভিন্ন বস্তি-কলোনি, মার্কেট, শপিং মল ও বিপণী বিতানগুলো। আগুনের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি এই ধরনের জনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে বহুতল ভবনগুলোর মালিক ও বাসিন্দাদের অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনতে না পারলে চট্টগ্রামেও রাজধানীর মতো বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।

সোমবার নগরীর কাজীর দেউরি, জামালখান, লালখান বাজার, ওয়াসা, জিইসির মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানের ভবন পরিদর্শন শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের আটটি টিম। এরপর সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসেবে, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৭ হাজারের মতো বহুতল ভবন আছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভবন আবাসিক এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক- উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভবনগুলোই সবচেয়ে বেশি আগুনের ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

জসিম উদ্দিন জানান, বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা জরিপ করে দেখেছি নগরীর ৯৩ শতাংশ ভবনের অনাপত্তি পত্র নেই। ৯৭ শতাংশ ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক ছাড়পত্র ও নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেই। এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও নেই ভবনের বাসিন্দাদের। সে হিসেবে বলতে গেলে, শতভাগ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত ভবন একটিও নেই চট্টগ্রামে।

তিনি জানান, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী ছয় তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হলে তিন স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর নিচে হলে দুই স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তবে এর আগে ফায়ার ফাইটিং ফোর পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনের স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, ফায়ার কমান্ড স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ফায়ার সার্ভিস সেখানে বসবাসের জন্য ছাড়পত্র দেবে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছাড়পত্র পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির তত্ত্বাবধানে ২০ শতাংশ বসবাসকারীকে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে মৌলিক সাধারণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। দুই বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস পরপর এবং এরপর থেকে ছয় মাস পরপর ভবনে ফায়ার মহড়ার আয়োজন করতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের যে ৪৩টি কলোনি-বাজার, মার্কেট-বিপণী বিতানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ, সেগুলো হচ্ছে- হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট, বলিরহাট মার্কেট, ভেড়া মার্কেট, চাক্তাই চাউল পট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, মিয়াখান নগর পুরাতন ঝুট মার্কেট, ওমর আলী মার্কেট, পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়াবাজার মার্কেট, ফইল্ল্যাতলি বাজার, চৌধুরী মার্কেট, রেলওয়ে বস্তি, কলসি দিঘীর পাড় এলাকাধীন কলোনি, আকমল আলী এলাকাধীন কলোনি, চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিংমল, গোলজার মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকমুন্ডি লেইন, ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুন বাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, সিঙ্গাপুর সমবায় সমিতি মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, দুই নম্বর গেইট রেলওয়ে বস্তি এলাকা, অক্সিজেন রেল রাস্তা সংলগ্ন বস্তি, বার্মা কলোনি, ড্রাইভার কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি ও শেরশাহ কলোনি।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা চাই, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাও এগিয়ে আসুক। আমরা আইন মানতে তাদের বাধ্য করি। দুর্ঘটনা ঘটবে। কিন্তু বিপর্যয় থেকে যেন আমরা মানুষকে হেফাজত করতে পারি। মানুষকেও নিজেদের রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৩ লাখ ভবন রয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজারের মতো রয়েছে বহুতল ভবন। যার অর্ধেকেরও বেশি ভবন আবাসিক এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভবনগুলোই সবচেয়ে বেশি আগুনের ঝুঁকিতে আছে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জায়েদ খানের নায়িকা হচ্ছেন টালিউডের পূজা ব্যানার্জি Mar 29, 2024
img
বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পৌনে ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান Mar 29, 2024
img
আজ ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ Mar 29, 2024
img
দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ Mar 29, 2024
img
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড Mar 28, 2024
img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024