গ্রিনলাইন বাসচাপায় পা হারানো রাসেল ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কায়

গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় পা হারানোর মামলায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলেও জরিমানার টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকার।

বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ টাইমস’র সঙ্গে আলাপকালে রাসেল এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

হাইকোটের রায়ের ওপর সন্তুষ্ট প্রকাশ করে প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকার বলেন, ‘গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আসলে রায় মানবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়াও শুনেছি উচ্চ আদালতে রায় হওয়ার পরও তারা অনেক মন্ত্রী-মিনিস্টারের সঙ্গে বসছেন। টাকা না দেওয়ার জন্য গ্রিনলাইনের মালিক দেশ ত্যাগ করেছেন।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে রাসেলকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এছাড়াও দুপুর দুইটার মধ্যে গ্রিনলাইন পরিবহনটির ব্যবস্থাপককে তলব করেছেন আদালত। পরে দুপুর ২ টায় ফের শুনানি হয়। এ সময় গ্রিনলাইন পরিবহন কোম্পানির ম্যানেজারকে জরিমানা না দেওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি মালকি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে আদালতকে জানান।

পরবর্তীতে আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে ম্যানেজারকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গ্রিন লাইনের সব গাড়ি জব্দ করে নিলামে তুলে টাকা আদায় করা হবে বলেও আদালত জানিয়েছেন।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এই হুঁশিয়ারি আসে। একইসঙ্গে গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস রাসেল সরকারকে চাপা দেয়।

সেই দিনের কথা স্মরণ করে রাসেল বলেন, এটা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা নয়। এটা ইচ্ছে করে করা হয়েছে। আমি কেরানীগঞ্জ থেকে আসছিলাম। আসার পথে গ্রিনলাইন বাসচালক আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার এক পর্যায়ে সিগনালে দাঁড়ালে গ্রিনলাইনের বাসের চালককে জিজ্ঞাসা করতে যাই; কেন আমার গাড়িতে ধাক্কা দিলেন। তখন সে স্বীকার করতে চায় না; যে আমার গাড়ি ধাক্কা দিছে। তর্কের এক পর্যায়ে বিষয়টি আমি ট্রাফিক পুলিশকে জানাই। পুলিশও আমাকে কোনো সহযোগিতা করে নাই। এক পর্যায়ে গ্রিনলাইনের চালক গাড়ি নিয়ে যেতে চায়।

‘কিন্তু গাড়ি নিয়ে যেতে বাধা দেই। এ সময় আমি বলি- আপনি গাড়ি নিয়ে যাবেন না। আমার সাথে আমার বস আছে। উনার সাথে কথা বলে বিষয়টি মীসাংসা করে যান।’

অতীতের একটি অভিজ্ঞতার স্মরণ করে রাসেল বলেন, এর আগেও গাড়িতে একটা সমস্যা হয়েছিল; তখন মালিক আমার কাছ থেকেই ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন। এজন্য গ্রিনলাইনের চালককে আমার মালিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য বার বার অনুরোধ করি। এক পর্যায়ে গ্রিনলাইন বাসের চালক আমার বসের সঙ্গে কথা বলতে রাজিও হয়ে যান। এরপর চালক আামাকে তার বাসে (গ্রিনলাইন)উঠতে বলেন। পরে আমি বাসে উঠার জন্য ডান পাশ থেকে বাম দিকে দরজার দিকে যাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় গ্রিনলাইন চালক আমাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আমার বাম পা আলাদা হয়ে যায়। পরে আমাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাসেল আরও বলেন, হাসপাতাল নেওয়ার আগেই আমি বসকে বলেছিলাম, গ্রিনলাইনের বাসের চালককে আটকানোর জন্য। চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলাম; যেন আর কোনো চালক এভাবে দুর্ঘটনা না ঘটায়।

বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে রাসেল রাজধানীর আদাবরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বুধবার গ্রিনলাইন পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ দিতে আগ্রহী নয়। তাই বিষয়টি আমরা আইনিভাবে মোকাবেলা করব।’

 

টাইমস/কেআরএস/জেডটি

Share this news on: