চারুকলার ছাত্র কাঁপিয়েছে রূপালি পর্দা

অভিনয়ের মাধ্যমে হাসিয়ে লাখ লাখ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদ। আর সেই মানুষটি সবাইকে কাঁদিয়ে শনিবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার আসল নাম আবদুস সামাদ। তবে দর্শকদের কাছে ‘টেলিসামাদ’ নামে তিনি বেশি পরিচিতি পান। টেলিভিশন থেকে চলচ্চিত্রে পা রাখায় তার এই নাম হয়ে যায়, যা তিনি নিজেও আর বদলাননি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন তাকে 'টেলিসামাদ' নামটা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি এ নামেই পরিচিত হন।

সবাইকে হাসিয়েছেন যিনি, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ভালো নেই। আমার খবর কেউ এখন আর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। ঘরে বসেই কেটে যাচ্ছে আমার সময়। এখন কথা বলতেও কষ্ট হয়। দিনের পর দিন অসুস্থ হয়ে ঘরেই দিন কাটছে আমার। বাইরেও তেমন যাওয়া হয় না।’

যেভাবে অভিনয় জগতে আসা

১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদরের নয়াগাঁও এলাকায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা সামাদ তার বড়ভাই চারুশিল্পী আব্দুল হাইকে অনুসরণ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মেধাবি ছাত্র ছিলেন টেলিসামাদ। কিন্তু তার ছবি আঁকার চেয়ে অভিনয়ের প্রতি নেশা ছিল প্রবল। সেই নেশার কারণেই ১৯৭৩ সালে পরিচালক নজরুল ইসলামের ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে মাধ্যমে প্রথম অভিনয় জগতে যাত্রা শুরু করেন। চার দশকে প্রায় ৬শ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। টেলিসামাদ শেষ কাজ করেছেন অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিতে। তবে তিনি দর্শকদের কাছে ‘পায়ে চলার পথ’ ছবির মাধ্যমে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পান।

অভিনয় করেছেন মঞ্চ, নাটক ও চলচ্চিত্রে

মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র- এই তিন মাধ্যমেই দাপটের সঙ্গে গত কয়েক দশক ধরে অভিনয় করে গেছেন তিনি। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে তাকে পর্দায় দেখেছেন দর্শকেরা। এ যাবৎ অসংখ্য চলচ্চিত্র ও নাটকে নানা ধরনের চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে দারুণভাবে। নিজের অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের বিনোদন ও হাসিতে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখেন টেলিসামাদ। একসময় কৌতুক অভিনেতা বললেই চলে আসত তার নাম। সমানতালে অভিনয় করেছেন সিনেমায়, টেলিভিশনে। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। অভিনয়ের বাইরে অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন।

টেলিসামাদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র

জিরো ডিগ্রী (২০১৫)
কুমারী মা (২০১৩)
সাথী হারা নাগিন (২০১১)
মায়ের চোখ (২০১০)
আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০)
রিকশাওয়ালার ছেলে (২০১০)
মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯)
কাজের মানুষ (২০০৯)
মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি (২০০৯)
কে আমি (২০০৯)
কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)
বন্ধু আমার (১৯৯২)
শ্বশুর বাড়ি(১৯৯১)
ছুটির ফান্দে (১৯৯০)
মিস ললিতা (১৯৮৫)
ভাত দে(১৯৮৪)
মায়ের আঁচল(১৯৮৪)
নয়নের আলো (১৯৮৪)
সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪)
লায়লি মজনু(১৯৮৩)
নতুন বউ(১৯৮৩)
বড় বাড়ির মেয়ে(১৯৮২)
লাল কাজল(১৯৮২)
কলমিলতা(১৯৮১)
বাঁধন হারা(১৯৮১)
আলিফ লায়লা (১৯৮০)
শেষ উত্তর (১৯৮০)
চন্দ্রলেখা (১৯৮০)
এখুনি সময়(১৯৮০)
দিন যায় কথা থাকে(১৯৭৯)
বিজয়িনী সোনাভান(১৯৭৯)
মাটির ঘর(১৯৭৯)
রাজকুমারী চন্দ্রবান(১৯৭৯)
পিতা(১৯৭৯)
গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
বধূ বিদায়(১৯৭৮)
নাগরদোলা(১৯৭৮)
অশিক্ষিত(১৯৭৮)
তুফান(১৯৭৮)
জাদুর বাঁশি(১৯৭৭)
মতি মহল(১৯৭৭)
গুণ্ডা(১৯৭৬)
নয়নমনি(১৯৭৬)
বন্দিনী(১৯৭৬)
রঙিন রূপবান
বাদশা (১৯৭৫)
চাষীর মেয়ে(১৯৭৫)
অভাগী(১৯৭৫)
সুজন সখী(১৯৭৫)
শেষ থেকে শুরু(১৯৭৪)
কার বউ(১৯৭৩)

 

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024