চৈত্রের প্রচণ্ড রোদ ও কালবৈশাখীর আনাগোনায় জানান দিচ্ছে বৈশাখ সমাগত। আর বৈশাখকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে সব ধরনের প্রস্তুতি।
বরাবরের মতো এবারও বর্ষবরণের মূল আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চারুকলা অনুষদের এক প্রান্তে চলছে শোভাযাত্রার শিল্প কাঠামো নির্মাণের কাজ। আর আরেক প্রান্তে চলছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য জলরঙ, সরাচিত্র, মুখোশ, পুতুল, পাখিসহ নানান জিনিস তৈরি ও বিক্রি। সারাদিন চলছে এর প্রস্তুতি; যা নিয়ে পুরো চারুকলা অনুষদ এখন উৎসবমুখর।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও চারুশিল্পীরাও যোগ দিয়েছেন।
সম্প্রতি ছবি এঁকে এ প্রস্তুতিকার্যের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।
চারুকলার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলার পাশে নতুন রং লেগেছে শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য সবুজ-শ্যামল আঙিনায়। নববর্ষের আগেই যেন এখানে হাজির হয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সচল হয়েছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়।
মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের দায়িত্বে থাকা সমন্বয়ক আদিল হাসনাত বাংলাদেশ টাইমস’কে জানান, এখনও শিল্প কাঠামোর সংখ্যা চূড়ান্ত হয়নি। তবে ১০টির মত শিল্প কাঠামো থাকবে এবারের শোভাযাত্রায়। এর মধ্যে রয়েছে ঘোড়া, পাখি, উল্টা কলসি। সবচেয়ে আর্কষণীয় কাঠামো হিসেবে থাকছে বাঘ ও বকের শিল্প কাঠামো। বাঘ ও বকের রূপকথা অবলম্বনে এ শিল্প কাঠামোটি তৈরি করা হচ্ছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের ৪৮ নম্বর কবিতার ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ বাণীকে শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সেই সমস্যাগুলোর জন্যই এবারের শোভাযাত্রায় অনুপ্রেরণার উৎসব সন্ধান করা হবে। আর আমরা পাখির ডানার মতো উড়তে সবাইকে অনুপ্রেরণা দেব, এটিই আমাদের নতুন একটি মেসেজ। যেখানে কোনো গোঁড়ামি থাকবে না।
নিসার হোসেন বলেন, এবার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ায় শোভাযাত্রায় একটু ভাটা পড়বে। তাই আগের মতো শিল্প কাঠামো নিয়ে শোভাযাত্রায় যেতে দিতে পারব না। তবে পূর্বের বছরগুলোর মতোই আনন্দ ও উল্লাস থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরুর বছরেই তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করে এ শোভাযাত্রা।
টাইমস/টিআর/জেডটি