ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিন দিন পর থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে।
এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় চার বোরখা পরিহিত নারীসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- ওই মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফছার উদ্দিন (৩৩), আলিম পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম (২২), মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফা (৩৮), অফিস সহকারী নুরুল আমিন (৫০) এবং স্থানীয় আলাউদ্দিন (২৫), সাইদুল ইসলাম (২১), জসিম উদ্দিন (৩০)।
ঘটনার দিন থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত থানা-পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই সাতজনকে আটক করেছে। তবে এদের মধ্যে আফছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষও গ্রেপ্তার আছেন। অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসার গভর্নিং বডি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার দিন দুপুরে সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আফছার উদ্দিন ও ছাত্র আরিফুল ইসলামকে আটক করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কামাল বলেন, দুপুরে নুসরাতের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করায় ও আগে আটকদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে মাদ্রাসার দারোয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা, পিয়ন নুরুল আমিনকে আটক করা হয়। এছাড়া নুসরাতকে শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেপ্তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধকারী (অধ্যক্ষের স্বজন) সাইফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন ও জসিম উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আটকদের মধ্যে পাঁচজনকে নুসরাতের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হবে। তবে মামলার এজাহারের উল্লেখিত বোরখা পরা চার নারীর কাউকে পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি। শনাক্ত হলে তদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এর আগে, শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুর ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে লাইফসাপোর্টে রয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহ- এমন অভিযোগ এনে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাত শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে মামলা করায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে নুসরাত ও তার স্বজনদের অভিযোগ।
আরও পড়ুন...
‘ডাইং ডিক্লারেশনে’ যা বললেন অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী
পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: লাইফ সাপোর্টে সেই মাদ্রাসাছাত্রী
টাইমস/এইচইউ