ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দায়িত্বে অবহেলা ও বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বুধবার জানিয়েছেন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।
বুধবার মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যা প্রচেষ্টায় অভিযোগ ওঠা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ফেনীর আদালত।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় গত শনিবার আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখন ওই শিক্ষার্থীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটির ফুসফুসকে সক্রিয় করতে মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হয়।
মঙ্গলবার মাদ্রাসাছাত্রীটির পরিবার বলেছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছে না। হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে মেয়েটিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে পুলিশ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মামলার এজাহার নিয়েও পুলিশ কূটচাল চেলেছে।
পরিবারের এমন অভিযোগের পর বুধবার সোনাগাজীর ওসিকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এল।
নুসরাতকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান পরে থানায় যে মামলা দায়ের করেন, সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে ‘হাতমোজা, চশমা ও বোরকা’ পরিহিত আরও চারজনকে আসামি করা হয়। কিন্তু অনেকেই এ ঘটনায় সোনাগাজীর পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ করেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে পুলিশ ছিল, তারপরও এ রকম ঘটনা কীভাবে ঘটল, দোষীরা কীভাবে পালিয়ে গেল এবং ওই ঘটনার পর আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের কেন তিন দিন সময় লাগল- সেই প্রশ্নও ওঠে।
তবে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে পরিদর্শক মোয়াজ্জেম সে সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তারা আন্তরিকতার সঙ্গেই দেখছেন এবং নুসরাতের পরিবারকে পুলিশ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানান, ওসির প্রতিবাদী পক্ষের অনাস্থা আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তরের কারণ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, কোনোভাবেই যেন মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং স্থানীয় কেউ যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে জন্যই দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়া হয়েছে।
বুধবার অভিযোগ ওঠা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফউদ্দিন। ওই মাদ্রাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন ও ছাত্র আরিফের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত।
লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে চিকিৎসকদের কাছে রোববার জবানবন্দি দেন নুসরাত।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম ছিল শম্পা।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার সোনাগাজীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শম্পা নামের যে হামলাকারীর কথা অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী বলেছেন, সেই শম্পাকে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সোনাগাজী থানার পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার করা নারীর নাম উম্মে সুলতানা ওরফে পপি।
বুধবার পপি ও জুবায়েরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদেরও পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
টাইমস/এসআই