ফেনীর পথে নুসরাতের মরদেহ, বাদ আসর জানাজা

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর ফেনীর নিজ বাড়ির পথে রয়েছে নুসরাতের মরদেহ। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় নুসরাতের স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। বাদ আছর জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থান তাকে দাফন করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টায়। তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্তে অংশ নেয়। ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে লাশ বুঝে নেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা মানিক।

ময়নাতদন্ত করেন নুসরাতের ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সোহেল মাহমুদ। তার সঙ্গে ছিলেন বোর্ডের দুই সদস্য প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও প্রভাষক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক পরিচালক বলেন, আজ পুরো জাতির সঙ্গে ঢামেক পরিবার মর্মাহত। আমাদের তিন সদস্যের একটি টিম ছিল যারা ময়নাতদন্তের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। যেহেতু ময়নাতদন্তের সঙ্গে কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় আছে যেমন ডিএনএ, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্ট করতে হয়, তাই এই মুহূর্তে আমরা কোনও রিপোর্ট দিচ্ছি না। আমরা ডিএনএ নমুনা ও অন্যান্য যা প্রয়োজন তা সংগ্রহ করেছি। আমরা জানি ওনার এক্সটেন্সিভ বার্ন ছিল। আমরা এখন মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে নুসরাতের সুরতহাল সম্পন্ন হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহবাগ থানার এস এই শামছুর রহমান। এরপরই তিন সদস্যের বোর্ড ময়নাতদন্ত কাজ শুরু করেন।

নুসরাতের মৃত্যুতে শাহবাগ থানায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি নম্বর-৬০২) বিপরীতে পুলিশ সদস্যরা মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে ময়নাতদন্তের কাজ শুরু করা হয়।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাত ঢামেকে মৃত্যুবরণ করেন। ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত নুসরাতের চাচাতো ভাই মুহাম্মদ উল্লাহ ফরহাদ বলেন, নুসরাতের মরদেহ বাড়িতে আনার পর বাদ আসর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এরই জের ধরে ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি তখন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: