নুসরাতের পক্ষে প্রথম রাস্তায় নেমে এসেছিল যারা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, মানববন্ধন হয়েছিল। স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষিকা বিবিসিকে জানিয়েছেন, নুসরাত রাফির ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ এস এম সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে কয়েকশ ছাত্রীকে নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলটি তারাই বের করেছিলেন।

সোনাগাজী গার্লস পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষিকা বীথি রাণী গুহ বলছেন, এই ঘটনায় সারাদেশের মতো সোনাগাজীর মানুষও ছিলেন বিক্ষুব্ধ, কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর ভয়-ভীতি-হুমকির মুখে হয়তো অনেকে সেভাবে সোচ্চার হতে পারেননি।

বাংলাদেশের ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ওপর যৌন নিপীড়নের এবং তাকে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার পরও কেন স্থানীয়ভাবে এর কোনো প্রতিবাদ হয়নি, তা নিয়ে আলোচনা চলছে ঘটনার পর থেকেই।

তবে শিক্ষিকা বীথি রাণী গুহ বলছেন, ‘মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তারের পরে ২৮ তারিখ সকাল ১১টায় আমরা মেয়েদের নিয়ে রাস্তায় প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে সমাবেশ করেছি। সব শিক্ষক এবং প্রায় সাতশ’র বেশি ছাত্রী সেখানে ছিল।’

‘একটা নিরপরাধ মেয়েকে কেন একজন শিক্ষক নির্যাতন করলেন, কেন একটি মেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হলো, ওই অধ্যক্ষের শাস্তির জন্য আমরা মানববন্ধন করেছি।’ কিন্তু এই প্রতিবাদ সমাবেশ করার সময় স্থানীয়ভাবে কোনো সমর্থন তারা পাননি।

বীথি রাণী গুহ বলছেন, ‘সরাসরি কেউ কিছু বলেনি, তবে পরে ফেসবুকে অনেকে লিখেছে যে, মাদ্রাসায় হলেও সেখানের কেউ প্রতিবাদ করছে না, আশেপাশের স্কুল থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে না, অথচ অন্য স্কুলের ছাত্রীরা প্রতিবাদে নেমেছে, এটা তাদের পছন্দ হয়নি।’

মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেছিলেন তার মা। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে কয়েকজন বোরকা পড়া ব্যক্তি নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল বুধবার নুসরাত জাহান রাফি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান।

নুসরাত জাহানের মৃত্যুর পরে সোনাগাজীতে কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা স্কুল শিক্ষিকা বীথি রাণী গুহের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, যখন নুসরাত জাহানের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তখন ফেনীতে স্থানীয়ভাবে কতটা কী প্রতিবাদ হয়েছে?

বীথি রাণী বলছেন, ‘তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। কারণ প্রশাসন সক্রিয় থাকায় পক্ষে-বিপক্ষে তেমন কোনো কথা হয়নি। ভেতরে ভেতরে সবাই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছিল। বৃহস্পতিবার থেকে (মারা যাওয়ার পর) কিছুটা প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে তেমন সোচ্চার প্রতিবাদ হয়নি।’

স্থানীয় কিছু ক্ষমতাশালী লোকজনের কারণে এই প্রতিবাদ হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছেন, ‘এই এলাকাটি একটু গ্রামীণ এলাকা, বিশেষ করে ধর্মবিশ্বাস বেশি। এখানকার নারীরা বাইরে চলাফেরা করে কম, তাদের ভেতর ভয়ভীতিও বেশি থাকে।’

তাহলে তারা কিভাবে ২৮ তারিখে এই ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন?

এই শিক্ষিকা বলছেন, ‘আমরা স্কুলের শিক্ষকরা মনে করলাম যে, একটা মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আমরা একটি নারী প্রতিষ্ঠান, মেয়েদের স্কুল, আমাদের তো মাঠে নামতেই হয়। আমরা মহিলা শিক্ষক আছি ১২ জন, শিক্ষার্থী আছে ১১শ’র ওপরে।’

‘আমরা মনে করলাম, আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত, সে কারণেই আমরা প্রতিবাদ করেছি’- তিনি বলছেন।

যখন তারা জানতে পারলেন যে, মেয়েটির শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, তখন তারা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন।

‘শরীর একটু পুড়ে গেলে যা কষ্ট হয়, আর এই মেয়েটি তো শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরেও পাঁচ সাতদিন কীভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে, সেটা অনুভব করলে আর বলার ভাষা থাকে না।’

তিনি জানান, এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে মেয়েরা যেন অবশ্যই প্রতিবাদ করে, শিক্ষার্থীদের তিনি সবসময় সেই পরামর্শই দেবেন।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ