সবার সহযোগিতা ফিরিয়ে দিতে পারে মাসুরার দুরন্ত কৈশোর

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে 

মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।

তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,

পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ-কথার

পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা মনে মনে।

রবীন্দ্রনাথের এই গানটির মতোই দিগবিধিক ছোটাছুটি করতো হুমাইরা আক্তার মাসুরা। ইচ্ছে ডানা মেলে দূরে হারিয়ে যেতে চাইত সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাসুরার মন। শৈশব থেকেই দুরন্ত, হাসি-খুশি, চঞ্চল প্রকৃতির।

কিন্তু আজ তার জীবনের সব আনন্দ, চঞ্চলতা কেড়ে নিয়েছে আকস্মিক একটি ঘটনা। মনের আনন্দে ছুটে চলা তো দূরের কথা, নিজের দু’পা দিয়ে হাঁটতেই পারছে না আট বছর বয়সী মাসুরা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে মেয়েটি। কবে সে সুস্থ হয়ে আবার দুরন্তপনায় মেতে উঠবে সেই ক্ষণটির অপেক্ষা তার।

ঘটনা আজ থেকে দু’বছর আগের। স্কুল থেকে ফিরে একটি পেয়ারা গাছে উঠেছিল মাসুরা। অসাবধানতাবশত পা পিছলে নিচে পড়ে যায় সে। প্রচণ্ড ব্যথা পায় সে। দ্রুত তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা তার এক্স-রে করেন এবং মাসুরার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে বলে জানান। কয়েক মাস চিকিৎসা করানোর পর মাসুরা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে এবং আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে। সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে মাসুরা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুরা। তার বাবা বাচ্চু সরদার একজন রিকশাচালক ও তার মা একজন গৃহিনী। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে মাসুরাই সবার বড়।

হুমাইরা আক্তার মাসুরা রাজবাড়ী সূর্যনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। তার ছোট বোন আছিয়া আক্তার ইয়া (৯) সূর্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর তাদের একমাত্র ভাই মোহাম্মদ। বয়স মাত্র দুই বছর।  

দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুর শহরে রিকশা চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়াসহ ভরণপোষণের খরচ নির্বাহ করছেন বাচ্চু সরদার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। মেয়ের অসুস্থতার কারণে আজ নিঃস্ব প্রায়।

রোববার বাচ্চু সরদার বাংলাদেশ টাইমসকে জানান, অভাবের সংসার হলেও রিকশা চালিয়ে সুখে-শান্তিতেই রেখেছিলেন পরিবারকে। কিন্তু আচমকা একটি দুর্ঘটনা তার পরিবারের সব সুখ কেড়ে নেয়।

বাচ্চু সরদার জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে একটি পেয়ারা গাছে উঠে মাসুরা। আচমকা পা পিছলে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায় সে। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা এক্স-রে করে জানান মাসুরার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। কয়েকমাস চিকিৎসা করানোর পর সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে এবং আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে। সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর আবার অসুস্থ হয় মাসুরা।

এবার জ্বরে আক্রান্ত হয় মাসুরা। জ্বর থেকে সেরে উঠতে না উঠতেই চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয় সে। মেরুদণ্ডের হাড় বেঁকে যায় তার। এরপর মাসুরাকে ঢাকায় একজন হোমিও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই চিকিৎসকের ওষুধে মাসুরা সুস্থ হয়ে উঠে বলে জানান বাচ্চু সরদার।

কিন্তু দুর্ভাগ্য কিছুতেই মাসুরার পিছু ছাড়ছিল না, চিকনগুনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় মাসুরা। এ সময় দুই পা অবশ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ভেঙে যাওয়া মেরুদণ্ডের সেই স্থানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। কিন্তু টাকার অভাবে মাসুরার সঠিক চিকিৎসা হয়নি।

মাসুরার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে তাকে গত ২৮ মার্চ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা মাসুরাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩ এপ্রিল মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) আসেন তিনি। মাসুরা বর্তমানে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলায় রেড ইউনিটের ফিমেল ওয়ার্ডের ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

এখানে মাসুরার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তারপরও নিজের সন্তান বাঁচাতে মরিয়া বাচ্চু সরদার। দু’বেলা খাবার না জুটলেও মেয়েকে হাসপাতালে রেখে কোথাও যাচ্ছেন না মাসুরার মা-বাবা।

রোববার রাতে বার্ন ইউনিটে অসুস্থ মেয়ের পাশে বসে বাংলাদেশ টাইমসকে এসব কথা বলছিলেন বাচ্চু সরদার।

বাবা বাচ্চু সরদার জানান, বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানোর পর অনেকগুলো পরীক্ষা করানো হয় মাসুরার। আরো কয়েকটা পরীক্ষা এখনো বাকি। চিকিৎসকরা বলেছেন মাসুরার চিকিৎসা বাবদ তিন লাখ টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু এত টাকা সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিন লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা কীভাবে আমি সংগ্রহ করব? এমনিতেই তাকে (মাসুরা) হাসপাতালে নিয়ে আসার পর থেকে রিকশা চালাতে পারছি না। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় আমার কাছে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে এক লাখ টাকার মতো অনুদান পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে আমার মেয়ের চিকিৎসা চলছে। আরো দুই লাখ টাকা প্রয়োজন। এই টাকার ব্যবস্থা এখনো হয়নি।’

সমাজের হৃদয়বান ও  বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বাচ্চু সরদার বলেন, ‘আমার পরিবারে তিনবেলা খাবার জোটাতে পারি না। তারপরও মেয়ের চিকিৎসা করাতে চাই। তাই বিত্তবানদের কাছে আমার আকুল আবেদন, তারা যেন আমার মেয়ের পাশে দাঁড়ায়। তাদের সহযোগিতা পেলে মাসুরার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারব এবং সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব।’

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে মাসুরা তার বেডে শুয়ে আছে। তবে কিছুক্ষণ পর পর ব্যথায় কান্না করছে সে।

অসুস্থ মাসুরা বার বার বলছে, ‘আমি বাঁচতে চাই। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই।’

মাসুরার চিকিৎসায় কেউ সাহায্য করতে চাইলে তার বাবা বাচ্চু সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তার বাবার ব্যাংক হিসাব নম্বর, বিকাশেও টাকা পাঠাতে পারেন।

যোগাযোগ:

বাচ্চু সরদার

মোবাইল ফোন নম্বর: ০১৭৭১-৬৯৬৪৮৮(বিকাশ)

 

ব্যাংক হিসাব নম্বর:

বাচ্চু সরদার

সঞ্চয়ী হিসাব: ১২৩১৫১৬৫৪১৩

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, বোর্ড বাজার শাখা, গাজীপুর।

 

 

টাইমস/কেআরএস/এসআই

Share this news on: