সোহেল তাজের অপহৃত ভাগনের বিষয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রাম থেকে অপহরণের শিকার সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের ভাগনে ইফতেখার আলম সৌরভকে রোববার পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে রোববার দুপুরে সোহেল তাজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করা হবে। আরো তথ্য জানা যাবে। একজন ব্যাবসায়ীর এত ক্ষমতা কি করে? তার পেছনে কে আছে যার এত ক্ষমতা? কে সে গডফাদার যার হুকুমে রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে?’

সৌরভের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সৌরভকে এর আগেও রাষ্ট্রীয় একাধিক সংস্থার লোকজন ‘তুলে নিয়ে’ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সর্বশেষ ৯ জুন চাকরি দেয়ার নাম করে বাসা থেকে ডেকে পাজেরো জিপে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

শনিবার সোহেল তাজ এই বিষয় প্রথম ফেসবুকে লিখেন। এরপরই ঘটনাটি প্রকাশ্যে চলে আসে।

ওই দিন সোহেল তাজ লিখেন, ‘আমার মামাতো বোনের ছেলে (ভাগিনা) সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ (সৌরভ)-কে গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করছি সৌরভকে ফিরিয়ে দিতে তার পরিবারের কাছে। অন্যথায় আপনাদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। ঘটনার আড়ালে কারা আছেন তা আমরা জানি।’

চট্টগ্রামে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিরোধ, তারই জের ধরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সৌরভকে অপহরণ করেছে বলে তার পরিবারের অভিযোগ।

সৌরভের বাবা সৈয়দ মো. ইদ্রিস আলম জানান, ৯ জুন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার আফমি প্লাজার সামনে থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া সিটি ভিউ আবাসিক এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন সৌরভ। এ ঘটনায় ১০ জুন পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করা হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি এখনও।

অপহৃত সৌরভের পরিবারের অভিযোগ, আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ নামে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর যোগসাজশে এ অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

সৌরভের পরিবার জানায়, ২০১৭ সালে ব্যবসায়ী আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ ওরফে সালেহ আজাদের মেয়ের সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয় সৌরভের। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের বিষয়টি মেয়ের পরিবার মেনে না নেয়ায় দু'জনের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় ওই মেয়ের।কিন্তু কিছুদিন পর ওই মেয়ের বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর থেকেই তিনি সৌরভকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে আসছেন। বিয়ের পরও তার মেয়ের সঙ্গে সৌরভের যোগাযোগ রয়েছে অভিযোগ তুলে হুমকি-ধমকি দিতেন সালেহ আজাদ। সৌরভের পরিবারকেও বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় একটি দপ্তরে তাকে ডেকে নেয়া হয়। এরপর ওই দপ্তর থেকে ছাড়া পান তিনি। একদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে বনানী থানার ওসি সৌরভকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নাজেহাল করেন বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। সৌরভকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে পুলিশ ইচ্ছেমতো মুচলেকা নেয় বলেও অভিযোগ করছেন তারা। পরে বনানী থানার এক এসআইকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় ব্যবসায়ী সালেহ আজাদকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার ওমর ফারুককে নিয়ে বনানী থানায় ঢুকতে দেখেন সৌরভ। পাঁচ/সাত দিন পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়ে দু'জন বনানী এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সৌরভ ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তারাও একই প্রসঙ্গে জানতে চান। পরে বনানী থানা যুবলীগের নেতা পরিচয়ে ইব্রাহিম নামের একজন সৌরভকে হুমকি-ধমকি দেন।

গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার রাতে সৌরভের বনানীর বাসা থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় বাসার সিসিটিভি ফুটেজও নিয়ে যায় তারা। একটি কালো গাড়িতে তুলে তার চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে দেয়। একটি কক্ষে নিয়ে এক রাত রাখা হয় তাকে। এ সময় সৌরভকে ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন রাতে তাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময় তাকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাঙিয়ে বেশ কয়েকবার সৌরভকে ফোন করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ জুন তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে নগরের আফমি প্লাজার সামনে আসতে বলা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৌরভ আফমি প্লাজার সামনে যাওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা।

সৌরভের বাবা সৈয়দ ইদ্রিস বলেন, 'বিভিন্ন সময় পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পরিচয়ে ব্যবসায়ী সালেহ আজাদের মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া একবার র‌্যাব-১-এর পরিচয় দিয়ে তাকে তুলেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে গোয়েন্দা অফিসার পরিচয়ে সৌরভকে আইটি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি দেবে বলে বাসা থেকে আফমি প্লাজার সামনে ডেকে নেয়া হয়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাচ্ছি না।'

সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান বলেন, 'ব্যবসায়ী সালেহ আজাদ চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে একাধিকবার সৌরভকে হয়রানি করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আমার ছেলের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ আবু সালেহ বলেন, ‘আমি কেন ওদের সন্তানের বিরুদ্ধে লাগতে যাব। আমার কি এত ক্ষমতা আছে নাকি। আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার সন্তানরা কোরআনে হাফেজ। সৌরভের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে। পরে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ওরা কুৎসা রটাচ্ছে। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।’

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার(উত্তর) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। তবে এখনো উদ্ধার হয়নি।’

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র Apr 25, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024
img
চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ Apr 25, 2024
img
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের Apr 25, 2024
img
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা প্রতিরোধে জীবনযাপনে আনুন ৫ পরিবর্তন Apr 25, 2024
img
নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করলেন ন্যান্সি পেলোসি Apr 25, 2024
img
উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে : সিইসি Apr 25, 2024