সংসদে যা বললেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর ২৭ জুন বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

পাঠকদের জন্য তার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

স্মরণ করছি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, এই বাঙাল জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি, এই বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাহেবকে এবং স্মরণ করছি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সবাইকে।

আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই জেলখানায় শহীদ জাতীয় চার নেতাকে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মহুতি ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো সেই সমস্ত বীর শহীদদের ।

আজকে আমরা যারা মুক্তিযুদের প্রজন্ম আমার পূর্বপুরুষ যারা এই স্বাধীনতার, এই মাতৃকার জন্যে জীবন দিয়ে ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন।

এই পবিত্র সংসদে আমার পিতা সংসদ সদস্য ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ভাষা সৈনিক ছিলেন।

সেই পূর্বপুরুষের আদর্শ লালন করে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে এই পবিত্র সংসদে আসার সুযোগ হয়েছে। তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করি ।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার মূল্যেবোধকে বুকে লালন করে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজকে এই দেশ আর বাঙালি জাতিকে উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে এই বাঙালির প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ফজরের নামাজ আদায় থেকে শুরু করে পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করার পর এই বাঙালি জাতি আর রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আজকে দেশ ও জাতিকে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রনায়কদের কাছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে আজকে একটি উন্নয়নের রোল মডেল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সফল নেতৃত্বের অধিকারী হয়েছেন।

সারা বিশ্বের নেতৃবৃন্দ আজকের এই সফল নেতৃত্বকে ভূয়সী প্রশংসা করছে । আজকে সেই সফল নেতৃত্বের পুরোধা এই বাঙাল জাতিকে যিনি আজকে দিনরাত ভাত খাইয়ে শান্তিতে রাখতে রাত্রিযাপন এবং ঘুমানোর যে সফল নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে যিনি সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি তার শ্রম ঘাম অব্যহত রেখেছেন সেই নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেই নেতৃত্বের প্রতি আস্তা রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আমরা বলতে চাই- আজকে যারা এই পবিত্র সংসদে এসে যারা বলতে চায় এই বিএনপির সংসদ সদস্য ভাইয়েরা উনাদেরকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান হিসেবে আপনাদেরকে অনুরোধ জানিয়ে যাই।

এই বাংলাদেশে পঁচাত্তরের সেই ১৫ আগস্টের সেই হত্যাযজ্ঞ এই বাঙালি জাতি ভুলেনি তার পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের সেই সরকারের ২০০১ থেকে ২০০৫ বাংলাদেশে যে উগ্র জঙ্গিবাদের সেই সিরিজ বোমা হামলা সারা বাংলাদেশে, একই সাথে যে সিরিজ বোমা হামলার মতো ঘটনা এই বাঙালি জাতি তার মনসপটে ধারণ করে রেখেছে।

ময়মনসিংহে ঈদের পরদিন একইভাবে তিনটি সিনেমা হলে বোমা হামলা হলো। সেই বোমা হামলায় আসামি করা হলো সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান সাহেবকে, আসামি করা হলো আমাকে আসামি করা হলো সাবের হোসেন চৌধুরীকে।

সেই দিন পাকিস্তানি হানাদান বাহিনীর যে নির্মম অত্যাচার সেই অত্যাচারকে পিছে ফেলে গ্রেইন আর অপারেশন নামক সেই অপারেশনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সাহেবকে আমার পাশের সেলে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে সেই দিন শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ।

আমি শুনেছি সেই দিন মতিউর রহমান উচ্চারণ করেছিলেন এই একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং আমরা অস্ত্র তুলে নিয়ে এই বাংলার স্বাধীনতা এনেছি আর আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযুদ্ধা হয়ে এই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।

এই ইলেক্ট্রনিক চেয়ার থেকে ছিটকে পরে গিয়ে মতিউর রহমানের কোমড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল।

সেই দিন আমি মুক্তিযুদ্ধের সন্তান হিসেবে বিএনপির ভাইদের বলতে চাই- যেই মুক্তিযোদ্ধাকে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মুক্তযুদ্ধের সন্তান হিসেবে সেই টর্চারের সেই ফাঁটল এখনো আমরা শারীরিকভাবে সেই চিহ্ন বহন করি।

আমরা রাজনীতিতে বদ্ধপরিপক্ক আমরা রাজনীতিতে অব্যাহত। জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে এখনো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি।

আপনারা বলেন এই সংসদ অবৈধ আপনারা বৈধ কিনা অবৈধ সেটি প্রশ্ন আগে। আপনাকে কেউ দাওয়াত করে এই জায়গায় দাওয়াত খাওয়াতে আনেনি। আর আপনি যদি মনে করেন আপনার সার্টিফিকেট কাগজের মূল্য অনেক বেশি। সমাজ বা রাষ্ট্রে আপনার ১০ জনের চেয়ে সম্মান বেশি আমি সেই দিকে হাত দেব না।

আপনাদেরকে হুঁশিয়ার দিয়ে জানিয়ে দিতে চাই একাত্তরে দেখেছি আমার পিতার বাড়িতে কীভাবে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। একাত্তরে দেখেছি আমার পিতামহের বাড়িতে কীভাবে লুণ্ঠন হয়েছে। আমি দিখেছি সেই দিন একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় চিত্র।

আমি দেখেছি ২০০১ থেকে ২০০৫ এর এই বিএনপি জামায়াতের চিত্র। আজকে সেই পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে এই ২০০১ থেকে ২০০৫ বাংলা ভাইয়ের যে রামরাজত্ব বাঙালি জাতি দেখেছে। আর আপনাদের ম্যাডাম খালেদা জিয়া সাজসজ্জায় এতই ব্যস্থ ছিলেন। বাংলাদেশের কোন রাস্তা কোন সড়ক কোন ব্রিজ তার অবগত কোনো ধারণা আছে কিনা জানি না।

আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী যার ধমনিতে মুজিবের মুক্তার আদর্শ রক্তের শ্বেত কণিকায় প্রবাহিত। উনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীর নামসহ প্রত্যেকটি অঞ্চলের খাল-পুল, রাস্তা-ঘাট সমস্ত কিছুই তার নখদর্পে।

কাজেই এই শেখ হাসিনার এই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এগিয়ে চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে যে যখন নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নের রোল মডেল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে পরিচয় করে দাঁড়াবার একটি ব্যবস্থা এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নেতৃত্বের প্রতি আপনাদের আস্তা আছে বলেই আপনারা যে কোনো সময় দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এই নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস রাখেন।

বিধায় পবিত্র সংসদে আপনারা সংসদ সদস্য সেই প্রথা বজায় রেখে সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা আপনারা পাবেন বলেই আজকে এই সংসদে শপথ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। আর বুবুজানকে বলি আপনি যেভাবে বক্তব্য রাখেন... (এরপর তার মাইকের সাউন্ড আর শোনা যায়নি)

 

টাইমস/এএইচ/জেডটি

Share this news on: