স্ত্রীসহ কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সিনহা

যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। কানাডার গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে খবরটি৷

কানাডার দ্য স্টার জানিয়েছে, ৪ জুলাই বিচারপতি সিনহা ফোর্ট এরি সীমান্ত দিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

গণমাধ্যমটি আরো লিখেছে, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন ইস্যুকে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি৷

কোনো ব্যক্তি তার নিজ রাষ্ট্র থেকে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য বিতাড়িত হলে, ওই ব্যক্তি মানবিক কারণে অন্য রাষ্ট্রে প্রবেশ ও বসবাসের জন্য অনুমতি লাভ করতে পারে৷ আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি অধিকার রাজনৈতিক আশ্রয়৷

বিচারপতি সিনহা ছিলেন প্রথম হিন্দু, যিনি আদালতের শীর্ষ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

সিনহার দাবি, ২০১৭ সালের ২ জুলাই এক বৈঠকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় ‘সরকারের পক্ষে' রায় দিতে বলেছিলেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেদিনের কথায় রাজি না হওয়ায় দেশ ছাড়তে হয়েছে তাকে৷

দ্য স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসকে সিনহা আরো জানান, ‘আমাকে টার্গেট করা হয়েছে কারণ বিচারক হিসেবে আমি ছিলাম একজন অ্যাকটিভিস্ট৷ আমি যেসব রায় দিয়েছি তাতে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, এমনকি সন্ত্রাসীরাও ক্ষিপ্ত হয়েছে৷ আমি এখন নিজের দেশেই অবাঞ্ছিত।’

নিজ দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এস কে সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকে অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত বলছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম৷

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এ জাতীয় আশ্রয় প্রার্থনা করতে গেলে নিজ দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে হয়৷ এটা কোনোভাবে কাঙ্খিত না, এটা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে না৷ আমি মনে করি, তার (এস কে সিনহা) এই জাতীয় ভূমিকাটি এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে একেবারেই অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত৷ ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অভিযোগটি তার বিরুদ্ধে গুরুতরভাবে উঠতেই পারে।’

তিনি বলেন, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে আনীত কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক মামলা দায়ের করেছে৷ মামলার তদন্ত শেষে জানা যাবে অভিযোগের সত্যতা আছে কি নাই৷ সাবেক প্রধান বিচারপতির মনোবল থাকলে তিনি দেশে এসে আইনি লড়াইয়ে নামতে পারেন বলেও মনে করেন সরকারের এই মন্ত্রী৷

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে দ্য স্টার৷

তিনি জানিয়েছেন, ‘দেশ ছাড়ার পর থেকেই তিনি (সিনহা) সরকারের সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন, যেগুলো সঠিক নয়৷ তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা বা হুমকি নেই।’

রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি পোক্ত করার জন্যই সিনহা এসব বলছেন বলেও দাবি করেন মিজানুর রহমান৷

টরোন্টো থেকে প্রকাশিত কানাডিয়ান কুরিয়ার বলছে, সিনহার সঙ্গে তার স্ত্রী সুষমাও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ গেল বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন এস কে সিনহা৷

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পড়েন এসকে সিনহা৷ ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তিনি৷ পরে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান সাবেক এই প্রধান বিচারপতি৷

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: