ঈদযাত্রায় শুধু সড়কেই ঝরেছে ২২৪ প্রাণ

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুধু  মহাসড়ক ও সড়কে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর আহত হয়েছেন ৮৬৬ জন। সড়ক, রেল ও নৌপথে এবারের ঈদে মোট ২৪৪টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৯’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে এসেছে, ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ জন চালক, ৩ জন শ্রমিক, ৭০ জন নারী, ২২টি শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রাজনৈতিক নেতা এবং ৯০০ যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার পরেও শুধু পরিকল্পনার অভাবে সড়কে অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। পরিবহন খাতে চালক ও সহকারী, শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের পরও ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিবছর লক্ষ করা যায়। কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না থাকায় ভাড়া নৈরাজ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। পরিবহনশ্রমিকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা যতক্ষণ পর্যন্ত নির্ধারিত না হবে, তত দিন যাত্রীদের ভোগান্তি হবে এবং প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে হবে। কর্মঘণ্টা ও বেতন ঠিক না থাকার কারণে ঈদের সময় বেশি আয় ও মুনাফার আশায় চালকেরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। পাশাপাশি মালিকেরাও তাগাদা দিতে থাকেন। এর ফলে চালকেরা মাথায় টেনশন নিয়ে গাড়ি চালান।

এবারের ঈদের আগের চেয়ে ঈদের পরে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগের দিন ১১ আগস্ট ৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন মারা গেছে। আর ঈদের পরদিন ১৩ আগস্ট ২৪টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঈদের আগে সড়ক দুর্ঘটনা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে, যা ঈদের পর বেড়েছে। কারণ বাসচালক, যানবাহনগুলোকে বিরতি দেয়া হয়নি। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, ঈদের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে সড়কমন্ত্রী, র‍্যাব, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে ছিল। তবে ঈদের পরদিনই তার উল্টো চিত্র। সড়কে মনিটরিংয়ে কেউ ছিল না, সবাই ঘরে ঢুকে পড়েছে। সে সময় দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।’

সমিতির প্রতিবেদনটি ঈদযাত্রা শুরুর ৬ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের তথ্য নেয়া হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা ৪১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, ১১টি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে ঈদযাত্রা প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

‘এবারের ঈদে ভাড়া নৈরাজ্য খুব বেশি হয়েছে। সরকার যখন ভাড়া নির্ধারণ করে, তখন শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঠিক করে ভাড়া নির্ধারণ করে। কাজেই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঈদের পর দুর্ঘটনা বেড়ে যায় মনিটরিংয়ের অভাবে। গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এ আইন দ্রুত কার্যকর হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে’- বলেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইয়ুবুর রহমান।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করা, চালকের প্রশিক্ষণ, ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা, ঈদের পরে মনিটরিং কার্যক্রম বহাল রাখা, চালক-শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলাসহ ১২টি সুপারিশ দিয়েছে।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: