অক্সফোর্ড ভার্সিটিতে ব্যাকবেঞ্চার ইফতির দেড় কোটি টাকার স্কলারশিপ

ছোটবেলায় খুব একটা পড়াশোনা করা হয়নি। স্কুলে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে বললে কম বলা হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত পরীক্ষায় ১০০ তে পেয়েছিলাম ৫৭। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে ক্রমাগতভাবে গণিত ও বিজ্ঞানে ভাল করলেও সার্বিকভাবে কখনই ভাল ফলাফল করতে পারিনি। অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পাবার পর বাসায় ফোনের পর ফোন আসতে থাকে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে।

“ভাবি, আপনার ছেলে বৃত্তি পায়নি? ভাবি এখন থেকে ভাল না করলে কিন্তু কোথাও সুযোগ পাবে না পরে।” সত্যি কথা বলতে বাসায়ও কারও আমাকে নিয়ে তেমন কোন ভাবনা ছিল না। আমাকে দিয়ে তেমন কিছু হবে না সেটাই ছিল স্বাভাবিক।

আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও আমাকে নিয়ে কথা হত না। সবার ছেলেমেয়েদের নিয়ে কথা হত, কে কী হতে চায়। আমার কথা যদি কখনও আসত, সেটা ‘সেলিনার রোগা ছেলে’ হিসেবেই আসত।

পরীক্ষার ফলাফল ভাল হতে থাকে কলেজ জীবন থেকে। কলেজ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি কোচিংয়ের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ছাড়া আর কোন নম্বর পাইনি। বিভিন্ন কোচিং থেকে ভাইয়ারা বাসায় এসে অনুরোধ করত আমি যেন তাদের কোচিংয়ে পরীক্ষা দিই। ময়মনসিংহ শহরের কোচিংগুলোতে পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের তালিকায় প্রথম স্থানে সবসময় ‘হাসান সাদ ইফতি’ নামটি থাকায় অভিভাবকদের মাঝে এক প্রকার পরিচিতি লাভ করে ফেলি। তবে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি আমার তখনও যেমন অপছন্দের ছিল, এখনও তাই। আমি পড়তাম জানার জন্য, এখনও তাই করি। মানুষ ভাল বলল না মন্দ বলল, তাতে জ্ঞান অর্জনের পথের কোন পরিবর্তন হয় না।

আমি যখন বুয়েটে যন্ত্রকৌশল বা স্থাপত্য না পড়ে জার্মানিতে উড়ন প্রকৌশল পড়ার সিদ্ধান্ত নিই, তখন অনেকেই বাসায় এসে বোঝানোর চেষ্টা করে। “এই অবুঝ ছেলেকে বুঝাও”। এমনকি আমি জার্মানি যাবার পরও অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ আমাকে তড়িৎ কৌশল বা কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে বলে শুধুমাত্র চাকরির জন্য। কারণ আমি ভাত পাব না। সত্যি কথা বলতে আমি জার্মানিতে পড়াশোনা করার সময়ও অনেকে বলত যে, আমি ভাল ছাত্র হলেও কিছুটা অবুঝ, কিছুটা পাগল। এখন সেই মানুষগুলই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আমি শুধু উড়ন প্রকৌশলীই হয়নি। হাইপারসনিক্স এ কাজ করছি, গবেষণা করছি রকেট নিয়ে। ২০১৬ সালে যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু সুযোগ মিলেছে তা নয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছি ১.৫ কোটি টাকার বৃত্তি। এখনও ভাবলে খুব অবাক লাগে। আমার মত আর একজনকেও আমি খঁজে পাইনি এখানে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের গল্প যে ভিন্ন। জীবনতো কখনও ছকে বাঁধা হতে পারে না। তোমার গল্পটি তোমাকেই লিখতে হবে। আমি অবুঝই থাকতে চাই। আমি পাগলই থাকতে চাই। আমি আরও জানতে চাই।

 

লেখক : হাসান সাদ ইফতি
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: