জিতেই চলেছেন ওয়াইসি, বাড়ছে আকাঙ্ক্ষা

ভারতের সদ্য প্রকাশিত নির্বাচনী ফলাফলে এটি স্পস্ট যে দেশটিতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের জয় জয়াকার। দিল্লির মসনদে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় বারের আরোহন অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানদের আতঙ্কিত হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। দেশটির প্রায় ২০ কোটি মুসলমান বিগত সময়গুলোতে নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির হাতে। যদিও এ নিগ্রহ নতুন কিছু নয়।

এসব নিগ্রহ-নির্যাতনের মধ্যেও দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মনোবলও। তবে এর পেছনে বর্তমানে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। যিনি অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমএইএম) এর প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির হায়দ্রাবাদ নির্বাচনী আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাকে ঘিরে মুসলমানদের মধ্যে বাড়ছে প্রত্যাশা। তার নেতৃত্ব আগামীতে ভারতে মুসলমানদের একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে এই আকাঙ্খাও দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

ওয়াইসি এবারের নির্বাচনেও বিপুল সমর্থন নিয়ে নিজ আসনে জয় পেয়েছেন। নির্বাচনে যে বিজেপির জয়জয়াকার সেই দলটির প্রার্থী ড.ভগবত রাওকে প্রায় ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি। রাও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ছিলেন ওয়াসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। সে সময় তিনি লাখ দুয়েক ভোট বেশি পেয়ে জিতেছিলেন।

টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি যে আসনটি থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন সেটি ঐতিহ্যগতভাবেই অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (এআইএমএইএম)। এর আগে সেখানে নির্বাচিত হতেন আসাদউদ্দিনের বাবা সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি সেখানে ছয় দফা নির্বাচিত হন।

৫০ বছর বয়সী আসাদউদ্দিন ওয়াইসি একজন ব্যরিষ্টার। ‍যিনি ২০০৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর থেকে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মুসলমানদের এ সংগঠনটি মূলত পুরনো হায়দ্রাবাদ শহর কেন্দ্রিক। এর সঙ্গে তেলেঙ্গানার শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস)একটি অলিখিত জোট সম্পর্কও রয়েছে। এর আগে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি দুইবার চারমিনার অ্যাসেম্বেলি থেকেও রাজ্য সভার সদস্য নির্বাচিত হন।  

ভারতের ১৭-তম লোকসভা নির্বাচনে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) ১৬ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তবে হায়দ্রাবাদে তাদের প্রার্থী ছিলো অপেক্ষাকৃত দূর্বল। এখানে পুসতে শ্রীকান্ত নামের একজন নবাগত উদ্যোক্তাকে টিআরএস দাড় করায় ওয়াইসির বিপক্ষে। যিনি ছিলেন এ দলটির একজন নতুন মূখ। মূলত একটি সহজ যুদ্ধ ছিলো এটি। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো থেকেও খুব একটা সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না এ আসনটিতে।

২০০৪ সালে ওয়াইসি প্রথম এ আসনে নির্বাচনে অবতীর্ণ হন। সে সময় তার বাবা সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসি শারীরিক অসুস্থতার কারনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। প্রথমবার তিনি প্রায় ১ লাখ ভোটের একটি ব্যবধান গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তবে এর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই সে ব্যবধান বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২৩ মের ফলাফলে তিনি বিজেপির প্রার্থীর চেয়ে ২লাখ ৮২ হাজার ১৮৬ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হলেন।

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমএইএম) কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির শক্তিশালী সমালোচক। অতীতের ধারাবাহিকতায় হারদ্রাবাদের এ আসনটি যে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের সেটি প্রতিষ্ঠিত। তবে সেই সঙ্গে বিবেচ্য বিষয় এখানে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েই চলেছেন।

 

টাইমস/এমএস

Share this news on: