ছাত্র রাজনীতির ‍তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে যা বললেন ছাত্রলীগ নেতা

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ। তিনি এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০০৬-০৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্ররাজনীতির উত্থান-পতন ও তার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

বাংলাদেশ টাইমস-এর পাঠকদের জন্য তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল।

‍‍“ডাঙ্গার অতিকায় জীব হাতি। তার মুখের দু’পাশের দুটি ট্রেড মার্ক দাঁত আমাদের সবারই পরিচিত চিত্র। জগতের সকল প্রাণি খাওয়ার কাজে তাদের গতানুগতিক দাঁত ব্যবহার করে। একমাত্র হাতিই আলাদা। অর্থাৎ তার যে বিশাল দাঁত দুটো আমরা দেখি তা সে খাওয়ার কাজে ব্যবহার করেনা; খাওয়ার কাজে যে দাঁত ব্যবহার করে তা আমাদের নজরেই আসেনা।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ঘটনার সাথে চলমান সময়ের অনেক রাজনৈতিক নেতার গভীর মিল। অর্থাৎ তারা বক্তৃতার ময়দানে, মিডিয়া টকশোতে যা বলে কাজের বেলায় তা করেনা। আর কাজের বেলায় যা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আমরা জানি না।

স্কুল কলেজের পাঠ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরবর্তী সময় থেকে একজন ব্যক্তিকে পরিপক্ব হিসেবেই ধরা হয়। শুধুমাত্র এই সময়ের হিসেব করলেও ২০০৬-০৭ সেশন থেকে ছাত্র রাজনীতির পথচলা শুরু যা আজও চলমান। অগ্রজদের সময়ের তুলনায় এটা খুবই কম সময়। তবে বেলা অবেলা কালবেলার এই ১২-১৩ বছরের যাত্রা নিতান্ত তুচ্ছও নয়।

২০০৯ সালের কথা। গোলাম সারোয়ার কবির ভাই, তারেক আল মামুন ভাই, সোহেল রানা মিঠু ভাই সাস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন। গ্রুপিং মারামারির কারণে নির্ধারিত দিনের সম্মেলনটি আগের রাতে বাতিল করা হয়। তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলেন ‘রিপন-রোটন ভাই’।

এরপর ২০১০, ২০১১ করতে করতে ২০১২ এর ৪ নভেম্বর তিনবার তারিখ পরিবর্তনের পর সম্মেলন হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর প্রথমবারের মত প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাই। আমার ক্যাম্পাসে তখন অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে সময় লাগতো ৫ বছর।

২০১৩ এর ৮ মে কেন্দ্র থেকে ৭ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয় ‘সোহাগ-নাজমুল’ ভাইয়ের হাতে। যথারীতি বাদ পরলাম। কারণ আমার বাড়ি টাঙ্গাইল আর যে নেতার রাজনীতি করি তার বাড়ি বাগেরহাট। পরবর্তীতে ৮ মে ২০১৬ পূর্ণাঙ্গ হয় ‘সোহাগ-জাকির’ ভাইয়ের মাধ্যমে। এই আমলেও বারবার তারিখ হয়েছে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম/রেডি প্যাডের মাধ্যমে। সম্মেলন আলোর মুখ দেখেনি। এরপর দায়িত্বে আসেন ‘শোভন-রাব্বানী’ ভাই। তাদের আমলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি এরপর ‘জয়-লেখক’ দায়িত্বে আসলেও অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে সেই অমর কমিটি ২০২০ সালেও চলমান!!!!!

২০০৬-০৭ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাস থেকে আমি একটি মাত্র কমিটির নেতা হয়েছি। আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পেয়েছে পর্যায়ক্রমে ৫-৪ টি দায়িত্বশীল কমিটির নেতৃত্ব যারা আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা (বড় ভাই, বন্ধু, ছোট ভাই)।

সাস্টের চিত্রের সাথে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, মহানগরের চিত্র হুবহু মিলে যাবে যারা যুগের পর যুগ নেতৃত্বহীন। তাই বলা যায় আমরা চরম পর্যায়ের বৈষম্যের শিকার।

বিভিন্ন আমলের মধ্যে ‘সোহাগ-জাকির’ ভাইদের আমলটি ছিল আমার ছাত্র রাজনীতির জীবনে চিরস্মরণীয় অধ্যায়। একনায়ক রাজার এলাকা ভিত্তিক “মিউচুয়াল এগ্রিমেন্ট” যাকে বলা হতো। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

২০১৭ তে আমার কমিটির সভাপতি সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত হয়। ক্যাম্পাসে যোগ্যতা, অবস্থান, অবদান এবং সংগঠনের ১ম সহ-সভাপতি হয়েও আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাইনি। আমার অযোগ্যতা ছিল আমার বাসা সিলেটে না; এটা নেতার নিজস্ব বক্তব্য।

২০ মার্চ, ২০১৮ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার আগে আমি উপবন ট্রেনে ঢাকা চলে যাই। (সাথে ছিল পিডিবির ডিডি রুহুল আমিন ভাই সাস্ট ইকো ০৫, দোলন ভাই সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবীর ইমন ভাইর কাজিন, পিয়ার আলী ভাই বিডিবিল ব্যাংকের ডাইরেক্টর এবং আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেবের কাজিন। পরদিন ২১ মার্চ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাই ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মনিরুন্নেছা নিনু আপার সাথে দেখা করতে। উনার সামনে থাকা অবস্থায় খবর পাই আমিসহ ১২ জনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রেসে লেখা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক যা খুবই হাস্যকর। কারণ তারা কোন জরুরি সভা করেনি। প্রেস দেয়ার সময় তৎকালীন সভাপতি জনাব সাইফুর রহমান সোহাগ ভাই ছিলেন চট্টগ্রামে।

পরবর্তীতে ১০ মে ২০১৮ ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটির বিদায়ী সম্মেলনের পূর্বে দপ্তর বরাবর নিজ নিজ আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয় যা মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার হয়। “শোভন-রাব্বানী” ভাইদের কমিটি নানাভাবে যাচাই বাছাই করেই আমাকে তাদের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে স্থান দেয়।

এরপর মাঠে আসে বিতর্কিত ইস্যু। ধানমন্ডি ৩/এ পার্টি অফিসে ঘোষিত ১৭ জনের তালিকাতে আমার নাম ছিলনা। ‘শোভন রাব্বানী’ ভাইদের বিদায়ের পর ২/১ টা অনলাইনে আমার নামে বহিষ্কৃত অভিযোগ দিয়ে নিউজ করানো হয়। কোন রকম তদন্ত না করে শুধুমাত্র এই নিউজকে প্রমাণ ধরে ‘জয়-লেখক’ আমাকে অব্যাহতি প্রদান করে যা আমার দৃষ্টিতে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম ঢুকিয়ে দেয়ার মতই।

আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আমার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দুই বার সাধারণ সম্পাদক এবং দুইবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দল ক্ষমতায় আসার পর তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

আত্মবিশ্বাসের সহিত বলছি, সংগঠনে যে সময়, শ্রম, মেধা দিয়েছি তার তুলনায় বাড়াবাড়ি রকমের কিছু নেয়নি। নিজের জন্মস্থান থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়েও সবার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা কোন বিতর্কিত তো দূরের কথা তথাকথিত ক্লিন ইমেজের কতজনে পেয়েছেন পারলে হাত তুলে দেখান।

সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনারা চাইলেই যারে খুশি যখন খুশি এক খোঁচায় সরিয়ে/নতুন নিয়োগ দিচ্ছেন, এক কমিটি কয়েকবার করছেন আবার এক যুগেও কোন কমিটিতে হাত না দিয়ে যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকার এই যে সংস্কৃতি চালু করে যাচ্ছেন তা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর নয় বরং তা সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে বদ্ধপরিকর।

তাই সংগঠনের নির্বাহী প্রধানদের কাছে বিনীত আহ্বান থাকবে, প্রকৃত যাচাই বাছাই না করে সংগঠনের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে কারও হীন রাজনৈতিক লালসা সমৃদ্ধ চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেন আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্নের অপমৃত্যু না হয়।”

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024