ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তা দেওয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বহিষ্কৃত ওই নেতার নাম অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহম্মদ সোহাগ। তিনি জেলা সদরের কাজীর বাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আবদুর রহমান বিকম জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে ন্যক্কারজনক এ মামলায় আসামিদের পক্ষ নেওয়ায় জেলা সদরের কাজীর বাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহম্মদ সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের আগেই বুধবার বুলবুলকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার উপজেলা কমিটি বসে অ্যাডভোকেট বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি তাকে (বুলবুলকে) জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার ফেনী জজকোর্টে মামলার প্রধান আসামি ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ অন্য আসামিদের রিমান্ড আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন। বিচারক সাতদিনের স্থলে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসময় অ্যাডভোকেট বুলবুল আহমেদ সোহাগ রিমান্ডের বিপক্ষে আপিল করবেন বলে ঘোষণা দেন ও আসামির পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, দলের যেকোনো নেতাকে বহিষ্কারের এখতিয়ার রাখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কাউকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করার ক্ষমতা তৃণমূলের আছে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় কমিটিরই। কেন্দ্র বুলবুলকে বহিষ্কারের চিঠি দেয়ায় সেটি কার্যকর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
পোড়া শরীর নিয়ে টানা পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বুধবার রাতে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন নুসরাত। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
এরই জের ধরে ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি তখন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নুসরাতকে গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
টাইমস/এইচইউ